নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি

চলমান করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় অনেকটাই বিপর্যস্ত নেপাল। আর তাই মহামারি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে টিকা পাঠাতে ব্রিটেনের কাছে কাতর আর্জি জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে টিকা পাঠানোর এই অনুরোধ জানান তিনি।

বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রক্ষা করাটা ব্রিটেনের দায়িত্ব। তিনি বলেন, নেপালের গোর্খা সৈন্যরা যুক্তরাজ্যকে যে সেবা দিয়েছে, সেকথা স্মরণ করে হলেও ব্রিটেনের করোনা সহায়তা পাওয়া দেশের তালিকায় নেপালের নাম ওপরের দিকেই রাখা উচিত বরিস জনসন সরকারের।

কে পি শর্মা ওলি বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের সরকারকে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে নেপালের চলমান পরিস্থিতির দিকে একটু তাকাতে বলবো। মহামারির মধ্যে আমরা কিভাবে ভুগছি সেটা দেখতে বলবো।’

গত মাসে নেপালে করোনায় দৈনিক সংক্রমণ ৯ হাজারে পৌঁছায়। ভাইরাসে সংক্রমণের হার বিবেচনায় বিশ্বের মধ্যে দেশটির অবস্থান ওপরের দিকে। গত এক মাসে নেপালে ৪ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের মতো নেপালও হাসপাতালে শয্যা সংকট এবং অক্সিজেন সংকটে ভুগছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী কাঠমান্ডুর করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও দেশটির গ্রাম এলাকায় এখন ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেও নেপালে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১০০-এর আশেপাশে। কিন্তু মে মাসের শুরুতে এই সংখ্যা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজারে। অবস্থা বেগতিক দেখে এপ্রিল মাসে দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজনের সময়ের তুলনায় অনেক দেরিতে নেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া ভারতের সঙ্গে নেপালের সীমান্ত এখনও খোলা রয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সীমান্ত বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ার করণে ভারতে শনাক্ত করোনার অতি সংক্রামক ধরনটি নেপালে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই দেশটি এখন পর্যন্ত ব্রিটেনের কাছ থেকে ২৬০টি ভেন্টিলেটর এবং ২ হাজার পিপিই-সহ বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম সহায়তা হিসেবে পেয়েছে। কিন্তু ভাইরাস মোকাবিলায় টিকাও প্রয়োজন বলে উল্লেখ করছেন প্রধানমন্ত্রী ওলি।

নেপালের জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩ শতাংশেরও কম নাগরিককে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘মানুষকে টিকা দিতে পারলে আমরা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবো। অন্যথায় (মহামারি মোকাবিলা) আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোর্খারা ব্রিটেনের সেবা দিয়েছে। এছাড়া ব্রিটেনে বর্তমানে কাজ করছেন এমন অনেকের পরিবারও নেপালে রয়েছে।’

এসময় তিনি ব্রিটেনকে নেপালের ‘সবচেয়ে পুরোনো বন্ধু’ বলেও অভিহিত করেন।

সূত্র: বিবিসি

টিএম