সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরলেন বিজেপির মুকুল রায়। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তৃণমূল ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলে যোগ দেন তিনি।

এক সময় মমতার পর তৃণমূল কংগ্রেসে সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা ছিলেন মুকুল রায়। পরে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপিতে। পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির ‘চাণক্য’ বলে পরিচিত মুকুল ফের তৃণমূলে ফিরলেন।

মুকুল রায়কে ঘিরে বেশ কয়েকদিন ধরে জল্পনা চলছিল। শুক্রবার সেই জল্পনার অবসান হলো। এদিন বেলা সোয়া দুইটা নাগাদ তৃণমূল ভবনে পৌঁছান মুকুল রায়। তার মিনিটকয়েক আগে সেখানে পৌঁছেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পৌঁছান তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সদ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ভবনে বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। তারপরই আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগদান করেন মুকুল রায়।

শুক্রবার সকালে পুত্র শুভ্রাংশুসহ একাধিক ঘনিষ্ঠ কর্মীকে নিয়ে বৈঠক করেন মুকুল। তারপরেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যায়। ওই সময়েই মমতা একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন তৃণমূল ভবনে। সেই বৈঠকের পর মুকুলের তৃণমূলে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভালো ফলের নেপথ্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মুকুলকে অন্যতম কারিগর হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি যেমন তৃণমূল নেতাদের বিজেপিতে নিয়ে এসেছিলেন, অন্যদিকে তৃণমূল কর্মীদেরও নিজের কাজে ব্যবহার করেছিলেন।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও তৃণমূল থেকে একাধিক মুকুল ঘনিষ্ঠ নেতা বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু নির্বাচনের আগেই বিজেপিতে মুকুল খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তখন থেকেই বিজেপির সঙ্গে মুকুল রায়ের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করে।

নির্বাচনে মুকুলকে উত্তর কৃষ্ণনগরের টিকিট দেওয়া হয়। অনিচ্ছা নিয়েই ভোটে লড়েন তিনি। নির্বাচনীয় জনসভায় একবারও মমতাকে সরাসরি আক্রমণ করেননি। প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থীকেও সরাসরি আক্রমণ করেননি। সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলতে রাজি হননি।

নির্বাচনে মুকুল জিতলেও বিধানসভায় শপথ নিতে যাওয়া ছাড়া বিজেপির একটি বৈঠকেও অংশ নেননি। সূত্রের দাবি, তাকে বাদ দিয়েই শুভেন্দু অধিকারীকে বিরোধী দলনেতা হিসেবে নির্বাচন করার বিষয়টি ভালো ভাবে নেননি মুকুল। 

এরই মধ্যে তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে দেখতে হাসপাতালে যান। সেখানে মুকুলের সঙ্গে অভিষেকের দীর্ঘ কথা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। গত কয়েক দিনে তৃণমূলের সঙ্গে মুকুলের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলেও সূত্রের দাবি।

অবশেষে দীর্ঘ আলোচনার পরে মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তবে তাকে আটকানোর জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও চেষ্টা করেন। এখন বেশি কিছু সূত্র জানাচ্ছে, মুকুল আবার তৃণমূলে ফেরায় তার ঘনিষ্ঠ অনেকে নেতা তৃণমূলে ফিরতে পারেন। 

এএস