সাগরের গভীরে বড় আকারের চিংড়ির খোঁজ করার সময় যুক্তরাষ্ট্রের একজন জেলেকে গিলে ফেলেছিল বিশাল আকৃতির একটি হ্যাম্পব্যাক তিমি। তবে প্রায় ৩০-৪০ সেকেন্ড তিমির পেটে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওই লবস্টার শিকারি বের হয়ে আসেন।

তিমির পেটে ঢোকার পর আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে ফেরার মাইকেল প্যাকার্ড নামের ওই চিংড়ি শিকার বলছেন, গিলে ফেলার পর তিমিটি তাকে মুখ থেকে থুতুর সঙ্গে বের করে দেয়। গোড়ালি একটু মচকে যাওয়া ছাড়া তার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।

হ্যাম্পব্যাক তিমি ৫০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং একেকটির ওজন হতে পারে প্রায় ৩৬ টন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, এখন বিশ্বে এ রকম তিমির সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এমন তিমির পেটে ঢুকেও বেঁচে ফিরে নিজেও অবাক মাইকেল প্যাকার্ড।  

অন্য চাকরি নেওয়ার জন্য তার স্ত্রীর দীর্ঘদিন ধরে প্যাকার্ড করে আসছিলেন। অনুরোধের পরেও কেপ কডে ৪০ বছর ধরে চালিয়ে আসা ডুবুরির পেশা তিনি ছাড়তে চান না। এই কাজটি তিনি করতে ভালোবাসেন বলেই উপেক্ষা করে আসছেন স্ত্রীসহ পরিবারের অনুরোধ।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় গণমাধ্যম কেপ কড টাইমসকে ৫৬ বছরের মাইকেল প্যাকার্ড বলেছেন, তিনি ও তার সহযোগী মিলে তাদের নৌকা জা’ন জে নিয়ে শুক্রবার সকালে হেরিং কোভে যান। সেখানে পরিবেশ ছিল চমৎকার এবং পানিতে দৃষ্টিসীমা ছিল প্রায় ২০ ফিট।

তিমির পেটে গিয়েও জীবিত বেরিয়ে এলেন মাইকেল প্যাকার্ড। 

ডব্লিউবিজেড-টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘স্কুবা গিয়ার নিয়ে নৌকা থেকে পানিতে নেমে ডুব দেওয়ার পরই আমি বিশাল একটা ধাক্কা অনুভব করলাম এবং সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল।’

তিনি ধারণা করেছিলেন যে, তিনি হয়তো বিশাল আকৃতির সাদা তিমির হামলার শিকার হয়েছেন। সাধারণত ওই এলাকায় সেসব তিমি সাঁতরে বেড়ায়। প্যাকার্ড বলেণ, ‘তখন আমি আশেপাশে অনুভব করছিলাম আর বুঝতে পারলাম যে, সেখানে কোন দাঁত নেই।’

লবস্টার শিকারি প্যাকার্ড বলছেন, ‘আর তখন আমি বুঝলাম, হায় ঈশ্বর আমি একটা তিমির মুখের ভেতরে চলে গেছি আর সে আমাকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছে। এটাই শেষ, আমি মরে যাচ্ছি। সেই সময় বারবার শুধু আমার স্ত্রী আর দুই পুত্রের কথা ভাবছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘এরপর হঠাৎ সে পানির ওপরে ভেসে উঠে প্রবলভাবে মাথা নাড়তে লাগলো। আমাকে যেন বাতাসে ছুঁড়ে ফেলা হলো আর আমি আবার পানিতে পড়ে গেলাম। আমি মুক্ত হয়ে পানিতে ভেসে রইলাম। সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমি বেচে আছি।’

তার সহযোগী, যিনি তখন পাগলের মতো পানিতে প্যাকার্ডের অক্সিজেনের বুদবুদ খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন, দ্রুত তাকে ধরে নৌকায় তোলেন।

প্রোভিন্সটাউনের অগ্নিনির্বাপন বিভাগ সিবিএস টেলিভিশনকে নিশ্চিত করেছে যে, প্রোভিন্সটাউন সৈকতে একজন আহত লবস্টারম্যানকে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় সময় সকাল সোয়া আটটার সময় তারা একটি টেলিফোন পেয়ে ছুটে যায়।

কেপ কড হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার এই অবিশ্বাস্য ঘটনার বিস্তারিত জানতে সাংবাদিকরা প্যাকার্ডের কাছে ছুটে যান।

হ্যাম্পব্যাক তিমি সাধারণত মুখ যতটা সম্ভব হা করে মাছ, ক্রিল বা অন্য খাবার খেয়ে থাকে। তবে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্যাকার্ডের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা সম্ভবত একটি দুর্ঘটনা।

স্থানীয় সংবাদপত্র দি কেপ কড টাইমসকে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তিমি কখনো কোন মানুষকে গিলে খেয়েছে বলে তিনি শোনেননি।

এএস