দেশে করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে লকডাউন তুলে নেওয়ার ব্যাপারে নতুন চিন্তা-ভাবনা করছে ব্রিটেনের সরকার। সেই অনুযায়ী, পূর্ব ঘোষিত ২১ জুন লকডাউন উঠছে না সেখানে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি, তবে এ বিষয়ে সরকার প্রায় চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছে বলে বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন দেশটির সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীরা।

ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক মন্ত্রী ড্যামিয়েন গ্রিন বিবিসিকে বলেন, ‘লকডাউন আরও দুই বা তিন সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে। এই সময়সীমার মধ্যে যদি করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসে, সেক্ষেত্রে তা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা হবে।’

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব রোববার বিবিসিকে বলেছেন, ‘সম্ভবত আরও কিছুদিন ইংল্যান্ডের লোকজনকে হোম অফিস করতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণ আরও বিস্তৃত হোক, এমনটা মোটেই কাম্য নয়।’

সরকারের একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ২১ জুনের পর আরও চার সপ্তাহ লকডাউন জারি রাখতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি বর্তমানে সরকারের বিবেচনাধীনে আছে।

গত বছর ডিসেম্বরে ইংল্যান্ড করোনার অভিযোজিত ধরন আলফার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ লকডাউন জারি করেছিল ব্রিটেনের সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন তুলে নিতে চার ধাপের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই অনুযায়ী আগামী ২১ জুন থেকে সব ব্রিটেনবাসী করোনা বিধিনিষেধ মুক্ত জীবনে ফিরে যেতে পারবেন।  

ডিসেম্বরের পর থেকে স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ার‌ল্যান্ডে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ইংল্যান্ডে তা কাঙ্খিত পর্যায়ে হয়নি। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইংল্যান্ডে দৈনিক করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী , আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই করোনাভাইরাসের এযাবৎকালেরর সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিযোজিত ধরন ডেল্টায় আক্রান্ত।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল করোনাভাইরাস এবং এর প্রধান চারটি অভিযোজিত ধরনের মধ্যে ডেল্টা সবচেয়ে উচ্চ সংক্রামক ও প্রাণঘাতী। মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে ৬০ শতাংশ এবং এর অভিযোজিত ধরন আলফার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ডেল্টা। এমনকি, বাজারে প্রচলিত কয়েকটি করোনা টিকার ডোজকেও ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা আছে ভাইরাসের এই অভিযোজিত ধরনটির।

এই পরিস্থিতে দেশের ব্যাপক সংখ্যক জনগণকে করোনা টিকার আওতায় আনা এবং যাদের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরই লকডাউন শিথিলের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি দেশটিতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রোববার ব্রিটেনে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৪৯০ জন এবং  এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এই দিন সেখানে মারা গেছেন ৮ জন।

ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) জানিয়েছে, দেশে দৈনিক আক্রান্তের হিসেবে গত ২৮ দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন রোববার।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ