হামলার পর সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা
হামলার খবর শুনে নিজের আসন ছাড়ছেন আতঙ্কিত দুই মার্কিন আইনপ্রণেতা
মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে ঢুকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন বিক্ষোভ, তা ঠেকাতে পুলিশের গুলি ও চার জন নিহত হওয়ার সময় দেশটির আইনপ্রণেতারা ভবনের নিচের একটি সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেন।
জো বাইডেনের ইলেকটোরাল কলেজ জয়ে স্বীকৃতি দিতে বুধবার কংগ্রেসের অধিবেশন শুরুর পর হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল হিলের পূর্বদিকের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় তাদের অধিকাংশের হাতে ছিল ট্রাম্পের পতাকা।
বিজ্ঞাপন
ভেতরে ঢুকে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে এসব ট্রাম্প সমর্থক যখন ক্যাপিটল হিলের একতলার দখল নিয়ে নেন, ভেতরে তখন মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের যৌথ অধিবেশন চলছিল।
কিন্তু মুহূর্তেই ভেতরের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। প্রতিনিধি পরিষদের নিরাপত্তাকর্মীরা আইনপ্রণেতাদের সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ব্যারিকেড ভেঙে অনেকে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। সবাইকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলেন তারা।
বিজ্ঞাপন
এমন মুহূর্তে জানা যায়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সিনেট চেম্বার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এতে আতঙ্ক আরও বাড়ে। ট্রাম্পের ইলেকটোরাল কলেজ জয় ঠেকাতে রিপাবলিকানদের তোলা আপত্তি নিয়ে সিনেটে তখন বিতর্ক চলছিল।
তখন দুই কক্ষের সংযোগকারী অবকাঠামো ‘রোতুণ্ডার’ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছেন। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। এতে ভেতরে থাকা সবাইকে নিজ নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
তারপরও পরিস্থিতি দ্রুত বিপদজনক হয়ে ওঠে। কোনো কিছুই আর নিরাপদ মনে হয় না। ভেতরে থাকা আইনপ্রণেতাদের নিজ নিজ অবস্থানে থাকার কথা বলা হলেও প্রয়োজনে সরিয়ে নেয়ার কথাও জানানো হয়।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ফ্লোর ডিরেক্টর কেইথ স্ট্যার্ন আইনপ্রণেতাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে শান্ত হয়ে বসে থাকার আহ্বান জানান। নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ অন্যান্যদের কাছ থেকেও এমন নির্দেশনা আসে।
এরপর আরও আতঙ্কের খবর দিয়ে নিরাপত্তাকর্মীরা ঘোষণা দেন, রোতুণ্ডার ওখানে বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হয়েছে। আপনারা (আইনপ্রণেতারা) নিজের আসনের নিচে থাকা গ্যাস মাস্ক পড়ে নিন।
এমন ঘোষণা আসার সঙ্গে টেনেসি অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান স্টিভ কোহেন রিপাবলিকান সদস্যদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, ‘আপনাদের বন্ধুকে কল করেন, ট্রাম্পকে কল করেন।’
এমন সময় বিক্ষোভকারীরা দরজা ভেঙে চেম্বারের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ কংগ্রেসের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে। দরজার কাচভাঙা অংশের পাশে দাঁড়িয়ে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতি আরও বিপদজনক হয়ে ওঠার পর মিনেসোটার কংগ্রেসম্যান ডিন ফিলিপিস রিপাবলিকনদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, ‘আজ এসব কিছু হচ্ছে আপনাদের জন্য।’
পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে আইনপ্রণেতাসহ কংগ্রেসের অন্যান্যরা এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে ছোটাছুটি শুরু করেন। নিজেদের নিরাপদ রাখতে অনেকে কংগ্রেসের গোপন সুড়ঙ্গে আশ্রয় নিতে শুরু করেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তেজিত এসব আইনপ্রণেতার অনেকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে পাশের একটি দরজা দিয়ে ভবনের একেবারে নিচে একটি নিরাপদ সুরঙ্গে গিয়ে আশ্রয় নেন।
কংগ্রেসে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখে তার আগেই কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন স্থগিত করা হয়। পরে নিরাপত্তাকর্মীদের তিন ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও চারজন প্রাণ হারান।
হামলার ঘটনার পর পুলিশ ক্যাপিটল ভবন থেকে আইনপ্রণেতাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় ক্যাপিটল ভবন থেকে বিক্ষুব্ধ ট্রাম্প-সমর্থকদের হটিয়ে দেওয়ার পর ফের কংগ্রেসের অধিবেশন শুরু হয়েছে।
এএস