ইথিওপিয়ার তাইগ্রে প্রদেশে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। মঙ্গলবার প্রদেশের তোগোগা শহরের একটি মার্কেটে সামরিক বাহিনীর বিমান বোমা ফেলেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে।

এ ব্যাপারে বিশদভাবে জানতে ইথিওপিয়ার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল গেতনেত আদানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে এ হামলার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেননি আদানে।

রয়টার্সকে গেতনেত আদানে বলেন, ‘বিমান হামলা খুবই সাধারণ একটি সামরিক কৌশল। তবে সরকারি বাহিনী সেখানে কোনো বেসামরিক নিরস্ত্র মানুষকে লক্ষ্য করে কিছু করেনি।’

তোগোগা শহরের এক নারী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর ১ টার দিকে এই হামলা হয়েছে। হামলার সময় স্বামী ও মেয়েসহ সেই মার্কেটে ছিলেন তিনি। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও তার স্বামী ও মেয়ে- দুজনেই আহত হয়েছেন।

বুধবার রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো প্লেন দেখিনি, কিন্তু ওই মার্কেটের ওপর যখন বোমা পড়ল, সবাই ছুটে মার্কেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর আমরা সবাই ফিরে আসি এবং আহতদের উদ্ধার করা শুরু করি।’

ওই নারী যদিও বলেছেন, হামলার সময় মার্কেটটিতে প্রচুরসংখ্যক মানুষ ছিল এবং তাদের অনেকেই মারা গেছে, কিন্তু তার কথা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। সরকারি বাহিনীর হামলার ভয়ে তিনি এবং অন্যান্য ভুক্তভোগীরা রয়টার্সকে নিজেদের নামও জানাননি।

শহরের প্রধান হাসপাতালের একজন নির্বাহী কর্মকর্তা রয়টার্সকে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি বলেছেন, দ্রুত এই সংখ্যা আরও বাড়বে; কারণ শহরের প্রধান সড়কটি অবরোধ করে রেখেছে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো ধরনের যানবাহন ওই সড়কে চলতে দেখলেই হেনস্তা করা হচ্ছে।

হাসপাতালের ওই নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দু’টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য ঘুরপথে গিয়েছিল, কিন্তু সেখানে তারা আটকা পড়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে যথেষ্ট চিকিৎসা উপকরণ ও নেই। তাই খুব দ্রুত মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

গেতনেত আদানে অবশ্য বলেছেন, সামরিক বাহিনী কোনো সড়ক অবরোধ করেনি।

পূর্ব আফ্রিকার দরিদ্র দেশ ইথিওপিয়ার তাইগ্রে প্রদেশে দেশটির সামরিক বাহিনী ও তাইগ্রের সাবেক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ)-এর মধ্যে সংঘাত শুরু হয় গত বছর নভেম্বর থেকে।

৫০ লাখ মানুষের পার্বত্য প্রদেশ তাইগ্রেতে চলমান এই সংঘাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ, গৃহহীন হয়েছেন অন্তত কয়েক লাখ।

বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটি অব ঘেন্টের একদল গবেষক ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় পার্বত্য প্রদেশ তাইগ্রের সংঘাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা তাইগ্রেতে অন্তত ১৫০ টি গণহত্যা চালিয়েছেন; এবং এই গণহত্যায় নিহত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার মানুষ। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী-শিশু ছাড়া ৯০ এর অধিক বয়সী বৃদ্ধও আছেন। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যার সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড এটি।

২০২০ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আবি আহমেদকে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা বলে মনে করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে তাইগ্রেতে ইথিওপিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা হয়। হামলার পর দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এই প্রদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টকে (টিপিএলএফ) ক্ষমতাচ্যুত করে সেখানে আইনের শাসন ফেরাতে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন আবি আহমেদ।

অবশ্য আবি আহমেদের দাবি, বেলজিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অতিরঞ্জিত। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাতে বর্তমানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি চলছে তাইগ্রেতে।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ