ফোন পেলেই এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে পৌঁছে যাচ্ছেন। দ্বীপে দ্বীপে পৌঁছে দিচ্ছেন অক্সিজেন। করোনা আক্রান্ত কিংবা অন্য কোনো কারণে যারা অক্সিজেনের সমস্যায় ভুগছেন, সাইকেলে চেপে তাদের নিয়ম করে প্রতিদিন অক্সিজেন পৌঁছে দিতে বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এভাবেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোসাবার বালি দ্বীপের ৫ নম্বর গ্রামের বাসিন্দা সৌমিত্র মণ্ডল হয়ে উঠেছেন ‘অক্সিজেন ম্যান’। তার লক্ষ্য একটিই, সুন্দরবনে অক্সিজেনের অভাবে যেন কারও মৃত্যু না হয়। সৌমিত্রের এই উদ্যোগে আপ্লুত সংশ্লিষ্ট সবাই।

ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত সৌমিত্র। পড়াশোনার শেষে গোসাবার একটি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। বছর তিনেক আগে সেই কাজ হাতছাড়া হয়ে যায়। তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও কাজ না পাওয়ার হতাশায় আক্রান্ত হন ডায়াবেটিসে। তবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভেঙে না পরে সমাজসেবামূলক কাজের দিকেই পা বাড়ান ২৯ বছর বয়সী সৌমিত্র। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার দুস্থ ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য বইপত্র জোগাড় থেকে শুরু করে তাদের স্কুল, কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। পাশাপাশি গোসাবার ৯টি দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ডায়াবেটিস আক্রান্ত দুস্থদের সুগার, প্রেসার পরীক্ষা করে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে রোগীদের হাতে বিনামূল্যে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া থেকে নানা ধরনের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সৌমিত্র।

সম্প্রতি করোনার কারণে অক্সিজেনের অভাবে বহু মানুষের মৃত্যু দেখেছেন। এসব মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারেননি। গোসাবার মতো প্রত্যন্ত দ্বীপে একদিকে যেমন অক্সিজেন সিলিন্ডারের যথেষ্ট অভাব, তেমনি নিয়মিত সেই সিলিন্ডার রিফিলিং করে একের পর এক নদী পার করে আনারও যথেষ্ট সুবিধা নেই। তাই অক্সিজেন সেবা দেওয়ার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিলেন গোসাবার এই যুবক।

সম্প্রতি দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় একটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর জোগাড় করেছেন সৌমিত্র। তারপর চিকিৎসকের কাছে সেটির ব্যবহার শিখেছেন। এখন সাইকেলে ওই কনসেনট্রেটর চাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে। যারা অক্সিজেনের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের দোরগোড়ায় কনসেন্ট্রেটর নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন এই ‘অক্সিজেন ম্যান’। 

সৌমিত্রের ভাষ্য, ‘আমাদের চারিদিকে গাছগাছালি আর ম্যানগ্রোভের অরণ্য। তবুও অক্সিজেনের অভাবে এই দ্বীপের মানুষ মারা যাবে, এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই একটা অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন জোগাড় করে দ্বীপের মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তার এই কাজে স্থানীয় বিডিও থেকে ব্লক স্বাস্থ্য প্রধান পর্যন্ত অভিভূত। এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে সৌমিত্রের যাতায়াতের জন্য বিনামূল্যে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ডিও সৌরভ মিত্র। তিনি বলেন, ‘এ সময় সবাইকে একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে মহামারি মোকাবিলা করা উচিত। সৌমিত্র যে কাজটি করছেন, সেটা খুবই ভালো উদ্যোগ। ওকে দেখে এ ধরনের কাজে আরও কিছু মানুষ এগিয়ে এলে এই দ্বীপাঞ্চলে অক্সিজেনের অভাব অনেকটাই মিটে যাবে।’

ব্লক স্বাস্থ্য প্রধান ইন্দ্রনীল বর্গী বলেন, ‘গোসাবা ব্লকের ৯টি দ্বীপের সবগুলোতেই আমরা সরকারি উদ্যোগে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি ঠিকই। কিন্তু সৌমিত্র নিজে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়।’

সূত্র: এই সময়

এসএসএইচ