ভারতের মুসলিম নারী মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রির জন্য ভুয়া নিলামে তোলা হয়েছে। বিক্রির জন্য অনলাইনে একটি অ্যাপে নিলামে তোলা হলেও ওই নারীরা এ বিষয়ে জানেন না। তাদের অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করে একটি চক্র মুসলিম নারীদের নিলামে তুলে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নারীরা।

কীভাবে মুসলিম নারীদের নিলামে তুলে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো, সেব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির পুলিশ। ‌‘সুল্লি ডিল অব দ্য ডে’ নামের উন্মুক্ত সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গিটহাবে গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের ৮০ জনের বেশি মুসলিম নারী মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকের ছবি আপলোড করা হয়েছে। ভারতে মুসলিম নারীদের প্রতি অবমাননাকর গালি হিসেবে ‘সুল্লি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

গত সপ্তাহে বিমানের পাইলট হানা মহসিন খানকে তার এক বন্ধু একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে দেন। যে লিঙ্কে মুসলিম নারীদের ছবি এবং তথ্য তুলে ধরে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এই লিঙ্কে নিজের ছবিও দেখতে পান হানা। তিনি বলেন, চতুর্থ ছবিটি আমার ছিল। তারা আক্ষরিক অর্থেই ‘দিনের দাসী’ হিসেবে আমাকে নিলামে তুলেছে।

হানা মহসিন বলেন, এটি আমার মেরুদণ্ডকে শীতল করে দিয়েছে। ওইদিন থেকে আজ পর্যন্ত কেবল ক্রমাগতভাবেই আমার রাগ হচ্ছে। গিটহাব বলছে, নারীদের নিলামে তোলা অ্যাকাউন্টটি স্থগিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই অ্যাকাউন্টধারী গিটহাবের হয়রানি, বৈষম্য এবং সহিংসতায় উসকানি সম্পর্কিত নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।

দিল্লি পুলিশ এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। কারণ পুলিশও এখন পর্যন্ত নারীদের নিলামে তোলা ওই অ্যাকাউন্টধারীর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি।

সানিয়া আহমদ (৩৪) নামের অপর এক নারীও গত সপ্তাহে নিজেকে নিলামের তালিকায় দেখতে পান। ভারতের হিন্দুত্ববাদী অনলাইন ট্রোল আর্মি এর পেছনে জড়িত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এই ট্রোল আর্মির সদস্যরা সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ অনেক মানুষের কাছে হাজার হাজার বিদ্বেষমূলক বার্তা পাঠায়। হয়রানির শিকার অনেকেই সোস্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। 

ভারতে বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি মুসলিম বসবাস করছেন। তাদের অনেকেই বলছেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কট্টর হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা নিজেদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো মনে করছেন।

তথাকথিত গো-রক্ষার নামে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রায়ই গণপিটুনির শিকার হতে হচ্ছে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে। এছাড়া সম্প্রতি অন্যান্য বিদ্বেষমূলক অপরাধও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। 

গিটহাবে যেসব নারী টার্গেটের শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন ভারতীয় সাংবাদিক ফাতিমা খানও। তিনি বলেন, এভাবেই ভুয়া নিলাম তৈরি করা হয়েছে। এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? যারা এই তালিকা তৈরি করেছেন তাদের কী আদৌ শাস্তি হবে?— এক টুইট বার্তায় প্রশ্ন করেছেন তিনি।

‌‘মুসলিম পুরুষদের পেটানো হচ্ছে, নারীদের হয়রানি এবং অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। এসবের শেষ কখন?’

সূত্র: এএফপি।

এসএস