গত আট মাস ধরে চালিয়ে আসা সরকার গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর লেবাননের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক বৈঠকের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। 

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ বাবদা প্যালেস থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হারিরি বলেছেন, আমি সরকার গঠনের আলোচনা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তিনি বলেছেন, আউন কিছু সংশোধনীর দাবি করেছেন; যেগুলোকে তিনি অপরিহার্য বলে মনে করেন। আমরা পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হবো না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেশকে রক্ষা করুন।

হারিরির পদত্যাগের পর লেবাননের পাউন্ডের দর সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১ ডলারের বিপরীতে লেবাননের ২১ হাজার পাউন্ড মিলছে।

সাদ হারিরি বৃহস্পতিবার আরও পরের দিকে দেশটির একটি টেলিভিশনে সাক্ষাত্কারে সরকার গঠনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা নিয়ে কথা বলবেন। তবে এ বিষয়ে তার দফতর কথা বলতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।

ফ্রান্স, সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ সত্ত্বেও গত অক্টোবরে হারিরির পুনরায় নিয়োগের পর থেকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নও লেবাননের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের হুমকি দিয়েছে।

এর আগে, বুধবার সাদ হারিরি প্রেসিডেন্ট আউনের কাছে ২৪ সদস্যের মন্ত্রিসভা বিশিষ্ট সরকার গঠনের প্রস্তাব জমা দেন। তার এই প্রস্তাবের কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন প্রেসিডেন্ট আউন। লেবাননের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হারিরি বলেছেন, সর্বশেষ মন্ত্রিসভার যে খসড়া প্রস্তাব তিনি প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের কাছে জমা দিয়েছিলেন তা গৃহীত হয়নি। 

পরে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ বাবদা প্যালেসে আউনের সঙ্গে ২০ মিনিটের বৈঠক করেন হারিরি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি বলেছেন, আলোচনার সময় আমরা প্রস্তাব করেছি যে প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিসভার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার জন্য আরও সময় নিতে পারেন। কিন্তু মিশেল আউন বলেছেন, আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছি না বলে মনে হচ্ছে। যে কারণে আমি সরকার গঠন থেকে পদত্যাগ করেছি।  

দেশজুড়ে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে ২০১৯ সালের অক্টোবরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সাদ হারিরি। এক বছর পর পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সবাইকে নিয়ে ঐক্যের সরকার গঠনের ডাক দিয়ে অর্থনৈতিক সংস্কার আনার ঘোষণা দেন তিনি।

২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে লড়ছে লেবানন। সঙ্কটে জর্জরিত লেবাননের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা দারিদ্রে নিমজ্জিত হয়েছেন এবং মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায় লেবাননের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক মতবিরোধ দূর করে একটি ঐক্যের সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

এসএস