করোনার সংক্রমণ বাড়ার মধ্যেই জরুরি বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। দেশটিতে এ পর্যন্ত দশ লাখেরও বেশি মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং এতে মারা গেছেন প্রায় ৮ হাজার জন।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি, কারণ পরীক্ষার হার কম। হাসপাতালগুলোয় মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই- সাম্প্রতিক এক ছবিতে দেখা গেছে রোগীরা চেয়ারে বসে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাগ করে ব্যবহার করছেন।

দেশটিতে বর্তমানে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে, যা আগস্টের প্রথম দিন শেষ হবে এবং বলা হচ্ছে, এই জরুরি অবস্থা আর বাড়ানো হবে না। বিরোধী নেতারা বলেছেন, গত সপ্তাহে এই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলেও তাদের অবহিত করা হয়নি।

এতে মানুষের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, তারা তা জানতে চেয়েছেন। মঙ্গলবার দেশটির সংসদীয় অধিবেশন চলার সময় ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন পার্টির ডেপুটি চেয়ারম্যান গোবিন্দ সিং দেও প্রশ্ন করেন, আমাদের কেন জানানো হয়নি? এটা কার সিদ্ধান্ত ছিল?

ওই জরুরি অধ্যাদেশে মানুষের চলাচলে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা লঙ্ঘন করলে জরিমানা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

 

করোনা পরিস্থিতি চরমে মালেয়শিয়ায়

এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিও করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশটিতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। হাসাপাতালগুলোও বিপর্যস্ত।

মালয়েশিয়ায় এখন দিনে ১৪ হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে, মঙ্গলবার মৃত্যু হয়েছে রেকর্ড ২০৭ জনের। বিপুলসংখ্যক রোগীর এ 
চাপ সামালাতে না পারে হাসপাতালগুলো রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য শয্যা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

সোমবার দেশটির হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর কয়েকশ জুনিয়র চিকিৎসক চাকরি স্থায়ীকরণ ও উন্নত পরিবেশের দাবিতে ওয়াক আউট করেছেন।

যারা মরদেহের সৎকার করেন এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট কর্মীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা কোভিডে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ সৎকারের জন্য অসংখ্য কল পাচ্ছেন, যাদের মধ্যে অনেকে বাড়িতেই মারা গেছেন।

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বর্তমান জরুরি ব্যবস্থাও ‘আধাসেদ্ধ’ অবস্থা অর্থাৎ তা পুরোপুরি কাজ করছে না। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এই বিধিনিষেধ কোন কাজে আসছে না। সাহায্যের জন্য সাদা পতাকা উড়াচ্ছেন কেউ কেউ।

বিধিনিষেধের ফলে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তাদের কেউ কেউ সাহায্যের আবেদন জানাতে তাদের ঘরের বাইরে সাদা পতাকা উড়িয়েছেন।

এছাড়া মানুষের সঞ্চয়ও ফুরিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় অনেকে দিনে একবেলা খাবার খেয়ে টিকে আছেন। মানুষের এমন সংবেদনশীল খবরগুলো সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির গণমাধ্যমে উঠে আসছে।

এএস