তালেবানকে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিল সরকার
আফগানিস্তানের সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবান গত এক সপ্তাহে দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১০টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ অবস্থায় আজ আশরাফ গনির কাবুল সরকার তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে কাবুল সরকারের এমন প্রস্তাবের খবর জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কাতারে কাবুল সরকার এবং তালেবান নেতাদের মধ্যে চলমান ‘আফগান শান্তি’ আলোচনা থেকে এমন প্রস্তাব এসেছে। তবে আফগান সরকার বা তালেবানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব নিয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
আল-জাজিরা ও এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী সূত্রটি বলেছে, ‘আফগান সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতারের কাছে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। যেখানে আফগানিস্তানে সহিংসতা বন্ধের বিনিময়ে তালেবানদের ক্ষমতার ভাগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘদিন ধরে সরকার ও তালেবানের মধ্যে এই শান্তি আলোচনা চলছে। কিন্তু একদিকে যেমন আলোচনা চলছে, অপরদিকে আফগানিস্তানজুড়ে তালেবান যোদ্ধারা সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে একের পর এক অঞ্চল দখল করছে।
গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা দেন ৩১ আগস্টের মধ্যে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়বে। বাইডেনের এ ঘোষণার পর থেকে তালেবান দেশটি নিজেদের দখলে নিতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই শুরু করে। এ লড়াইয়ে সফলও হচ্ছে তারা।
তালেবান খুব দ্রুত গতিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিচ্ছে। গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এখন বড় বড় শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো দখল করছে তালেবান। এতে করে দেশটি মারাত্মক এক নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে।
তালেবান বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রগতির মুখে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মদ আহমদজাইকে অপরসারণ করেছে আফগান সরকার। এদিকে বৃহস্পতিবার তালেবানের হাতে দশম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ গজনি শহরের পতন হয়েছে।
রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে গজনির অবস্থান। কৌশলগত কারণে গজনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শহরটি কাবুল-কান্দাহার মহাসড়ক-সংলগ্ন। কাবুলের সঙ্গে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ এই সড়কপথ দিয়েই হয়ে থাকে।
তালেবানরা ইতোমধ্যে বাগলান প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরি, ফারাহ’র রাজধানী ফারাহ, নিমরোজের রাজধানী জারাঞ্জ, তাখারের তালোকান, কুন্দুজের রাজধানী কুন্দুজ, সার-ই-পল প্রদেশের রাজধানী সার-ই-পল, সামানগানের রাজধানী আইবাক, জাওজানের শেবেরগান, বাদাখশানের ফয়জাবাদ ও গজনি প্রদেশের রাজধানী শহর গজনি দখল করে নিয়েছে।
দেশটির প্রধান শহরগুলোর ভাগ্য নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উভয়পক্ষ এসব শহরের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সরকারি সেনারা কতদিন নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে সেটাই বড় প্রশ্ন। স্থানীয়রাও বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন।
বিবিসি বলছে, তালেবান মিলিশিয়ারা ইতোমধ্যে অর্ধেক আফগানিস্তান নিজেদের দখলে নিয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও ইরানের সঙ্গে ‘বর্ডার ক্রসিং’ রয়েছে। তবে তালেবান অবশ্য দেশের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করছে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মোট ভূখণ্ডের ৬৫ শতাংশে তালেবান তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। যে কোনো সময় আরও ১১টি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটতে পারে।
রয়টার্সের বুধবারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করছেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে তালেবান। আর ৯০ দিনের মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটতে পারে।
বিভিন্ন অঞ্চলে দুই পক্ষের এসব লড়াইয়ের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগান বিমান বাহিনী দেশটির বিভিন্ন স্থানে তালেবানের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন বলছে, নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন আফগানদেরই নিতে হবে।
নিজেদের মাতৃভূমির জন্য লড়াই করতে আফগান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েও কোনো আক্ষেপ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বাইডেন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আরও বলেছেন, আফগানিস্তানের জনগণকেই তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রজন্মকে ২০ বছর ধরে চলা ওই যুদ্ধে ঠেলে দেবেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এএস/জেএস