ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে গনির সরকার
কট্টরপন্থী বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবান রাজধানী কাবুলের চারপাশ থেকে আক্রমণ শুরু করায় আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশটির প্রধান শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র কাবুলই তালেবানের দখলে যাওয়ার বাকি ছিল। রোববার সকালের দিকে বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর যোদ্ধারা চতুর্মুখী আক্রমণ শুরু করায় আফগান সরকারের পতন আরও ঘনীভূত হয়েছে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে। হয় তাকে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার তালেবানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর লড়াইয়ের সাহসিকতার ব্যাপক প্রশংসা করে জনগণের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণ দেন আশরাফ গনি। তিনি বলেছেন, দেশে পরবর্তী অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা এবং জনগণের বাস্ত্যুচুতি প্রতিরোধ করাই এখন তার প্রধান অগ্রাধিকার।
তবে শিগগিরই তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, রোববার রাতে (স্থানীয় সময় শনিবার) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরও রক্তপাত এড়াতে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য আফগানিস্তানের সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কাবুলের প্রবেশপথে যোদ্ধাদের অবস্থানের নির্দেশ
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পরিস্থিতি রোববার সকাল থেকে দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে। কাবুলে ঢুকে পড়া নিয়ে তালেবানের কাছ থেকে বিপরীতমুখী বিবৃতি এসেছে। বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর একটি সূত্র কাবুলে যোদ্ধাদের ঢুকে পড়ার তথ্য জানালেও তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আলজাজিরাকে বলেছেন, তালেবান এখনো কাবুলে ঢুকে পড়েনি। তবে পরবর্তী পরিস্থিতি ‘শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর’ সরকারের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেছেন, কাবুলের কাছে একটি স্থানীয় প্রদেশের পতন হয়েছে আমাদের হাতে। শুধু তাই নয়, একেবারে কাবুল ঘেঁষা একটি জেলাও রোববার সকালের দিকে আমাদের যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে; যা রাজধানী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের।
অন্যদিকে, তালেবানের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা তালেবানের যোদ্ধাদের রাজধানীর সব প্রবেশ পথে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অত্যন্ত জনবহুল হওয়ায় হতাহতের ঝুঁকি বিবেচনায় যোদ্ধাদের শহরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে তালেবান বলেছে, শহরের নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব এখন সরকারের হাতে রয়েছে। সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনা অব্যাহত আছে।
কাবুল থেকে বিবিসির প্রতিনিধিরা বলেছেন, রাজধানী কাবুলে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে এবং তালেবানের যোদ্ধারা কাবুলের রাস্তায় পতাকা উড়িয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শহরের সব দিক থেকে রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করা শুরু করেছে তালেবান যোদ্ধারা। কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থান করা তালেবানের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করে আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, তালেবান যোদ্ধাদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে যারা কাবুলের বাইরে চলে যেতে চায়, তাদেরকে নিরাপদে সেই সুযোগ করে দেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নারীদেরকেও নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসএস/জেএস