অধিকাংশ প্রদেশ দখল করার পর রাজধানী কাবুল ঘিরে রেখে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির কার্যালয় প্রেসিডেন্ট প্যালেসে ঢুকেছে দেশটিতে বিগত বিশ বছর ধরে সরকারি ও বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের প্রতিনিধিরা। 

কাতারের রাজধানী দোহায় কিছুদিন ধরে আফগান সরকারের সঙ্গে কথিত শান্তি আলোচনায় তালেবানের যেসব প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আট থেকে নয় জন এখন প্রেসিডেন্ট প্যালেসে রয়েছেন বলে জানাচ্ছে সিএনএন।

ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের উদ্দেশে তালেবান প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার যাত্রা করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তালেবান প্রধানের উপস্থিতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৈঠকে রয়েছেন এমন সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্যালেসে তালেবানের ওই প্রতিনিধিদের মধ্যে তালেবানের উপপ্রধান নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ভাই আনাস হাক্কানিও রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দোহায় গত সপ্তাহে কথিত আফগান শান্তি আলোচনায় তালেবান প্রতিনিধি এবং আফগান সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তান, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল।

তালেবান কাবুলের চারপাশ ঘিরে ফেলার পর ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এ আলোচনার মধ্যে জার্মানিতে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত আলী আহমদ জালালিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগের খবর দিচ্ছে আফগান গণমাধ্যমগুলো।

তালেবানের একজন মুখপাত্র এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব অন্য পক্ষের (আফগান সরকারের)। তবে সরকার এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা না করলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।’  

কাবুলের পরিস্থিতি এখন থমথমে। সরকার বলছে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে। তালেবানও জানিয়েছে, তারা জোর করে রাজধানী কাবুল দখল করবে না। তবে কাবুলের সব প্রবেশদ্বারে তালেবান যোদ্ধাদের অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।

রয়টার্স জানাচ্ছে, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে পরামর্শ করছেন বলে গতকাল জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। পদত্যাগ করে তিনি তালেবান কমান্ডারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ তৈরি করে দিচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

তালেবান যোদ্ধারা কাবুলের চারপাশ থেকে শহরটিতে ঢুকতে শুরু করেছে এমন খবর আসার মধ্যে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো টিভিতে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে কথা বলতে দেখা গেছে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল সাত্তারকে।

আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এমন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাজধানী শহর কাবুলে কোনো ধরনের হামলা হবে না।   

আফগান সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, তালেবানের আলোচকরা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে যাচ্ছেন। এতে করে চাপের মুখে গনি সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যে শুরু হয়েছে তা স্পষ্ট।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানাচ্ছে, তালেবানের দাপটে কাবুলের বাসিন্দাদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল তা অনেকাংশে কেটে গেছে। সবাই যার যার বাড়িতে অবস্থান করছেন। রাস্তায় এখন তেমন কোনো যানবাহন দেখা যাচ্ছে না।

তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেছেন, তালেবান এখনো কাবুলে ঢোকেনি। তবে যোদ্ধাদের কাবুলের প্রবেশদ্বারগুলোতে থাকতে বলা হয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে সরকারের সহযোগিতার ওপর।  

রাজধানী কাবুলের উপকণ্ঠে তালেবান যোদ্ধাদের দেখা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর কাবুল ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসির এক প্রতিনিধি বলছেন, কিছু সরকারি অফিস খালি করতে বলা হয়েছে এবং দোকানপাট বন্ধ। এর কোনো কারণ জানানো হয়নি।

আফগান প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, কাবুলের আশেপাশে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গুলির শব্দ শোনা গেছে কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনী আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করে শহরের নিয়ন্ত্রণ দখলে রেখেছে।

এএস