কয়েক দিনের মধ্যেই শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর চায় তালেবান
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশের পর দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী তালেবান বলেছে, তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রত্যাশা করছে। একই সঙ্গে অতীতের কট্টর ইসলামি বিধি-বিধান শিথিল করার অঙ্গীকারও করেছে তারা।
এদিকে, রোববার তালেবানের সদস্যরা রাজধানীতে ঢুকে পড়ায় বিদেশি কূটনীতিক এবং অনেক স্থানীয় বাসিন্দা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বিজ্ঞাপন
তালেবানের তড়িৎগতিতে দেশটির বেশিরভাগ এলাকার দখল নেওযায় আমেরিকার কূটনীতিকরা কাবুল দূতাবাস ছেড়ে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর ২০ বছরের আফগান যুদ্ধ শেষে আবারও দেশটির ক্ষমতায় আসতে চলেছে তালেবান।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, বিশাল আকৃতির দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট চিনুক এবং দ্রুতগতির ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টারগুলোকে কাবুলের মার্কিন দূতাবাসের স্টাফদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, একটির পর একটি হেলিকপ্টার দূতাবাসের ভেতরে নামছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রী বোঝাই করে উড়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বার্তা সংস্থা এপি বলছে, রোববার সকালে কূটনৈতিক সাঁজোয়া যানের বহর মার্কিন দূতাবাস এলাকা ত্যাগ করতে দেখা যায়। কূটনীতিবিদরা ভবন ত্যাগ করার আগে স্পর্শকাতর দলিলপত্র পুড়িয়ে ফেলেন এবং সে কারণে দূতাবাসের ছাদ থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তালেবান যোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে রাজধানীতে পৌঁছে গেছেন। তবে কাবুলে কোনো ধরনের লড়াইয়ের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনা চলছে জানিয়ে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, শান্তিপূর্ণ এবং সন্তোষজনক ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত তালেবান যোদ্ধাদের কাবুলের সব প্রবেশপথে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক আফগানিস্তানের শিক্ষাবিদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আহমদ জালালিকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। তবে জালালিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে তালেবান মেনে নেবে কি না সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।
তালেবানের একজন মুখপাত্র নারীদের অধিকারের প্রতি যোদ্ধারা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মাত্র ১০ দিনের দ্রুতগতির আগ্রাসী অভিযানের মাধ্যমে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় নারীদের অধিকারের ব্যাপারে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশটিতে ইসলামি শরীয়াহ আইন কার্যকর করে তালেবান। ওই সময় ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর নিক্ষেপ, চুরির জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ জারি করে তালেবান।
তবে রোববার নারী অধিকারের ব্যাপারে যে বিবৃতি দিয়েছে তা বিশ্বজুড়ে এই ইস্যুতে তৈরি হওয়া উদ্বেগ সাময়িক নিবারণের চেষ্টা বলে মনে করছেন অনেকে। তালেবানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নারীরা একাই বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন এবং শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকবে।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা
আফগানিস্তানের প্রশাসনকর্মীদের উদ্দেশে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে তালেবান। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে নিযুক্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বানও জানিয়েছে দেশটির এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী।
রোববার তালেবান মুখপাত্র সোহেল শাহিন এক টুইটে বলেন, ‘আফগানিস্তানে যারা এর আগে আগ্রাসনকারীদের জন্য কাজ করেছে বা তাদের সাহায্য করেছে, অথবা এখন যারা দুর্নীতিবাজ কাবুল প্রশাসনের বিভিন্ন পদে আসীন রয়েছে – তাদের সবার জন্য ইসলামিক আমিরাত দরজা খোলা রেখেছে এবং ক্ষমা ঘোষণা করেছে।’
‘আমরা আরেকবার তাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যেন তারা দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে এগিয়ে আসেন।’
চলতি বছর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর মে মাস থেকে আফগানিস্তান দখলে অভিযান শুরু করে তালেবান।
তারা অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে দেশের ৩৪টি প্রদেশের ২৮টি দখল করে বর্তমানে কাবুলে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পদত্যাগ করেছেন এবং দেশটিতে একটি অন্তবর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
এসএস/জেএস