আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল সফরে গেছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি। পরে কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তিনি আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

এদিকে তালেবানের পক্ষ থেকে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আফগান প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার এই সাক্ষাতের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯৯০-এর দশকে তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতাদের এ ধরনের কোনো সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করা হতো না।

আফগানিস্তানে তালেবানের পক্ষ থেকে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ ঘোষণা করার পর মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি হলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো বিদেশি নেতা যিনি হাসান আখুন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসান আখুন্দ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করছেন।

তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম এক টুইটার বার্তায় এ সাক্ষাতের খবর প্রকাশ করে বলেছেন, বৈঠকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানি উপস্থিত ছিলেন।

নাঈম জানান, বৈঠকে উভয়পক্ষ মানবিক সাহায্য, আফগানিস্তানের উন্নয়ন কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ এবং ইসলামী আমিরাতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া দুঃসময়ে আফগান জনগণের পাশে থাকার জন্য বৈঠকে কাতারের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান আফগান প্রধানমন্ত্রী।

তালেবানের মুখপাত্র জানান, সাক্ষাতের সময় মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ ও আফগানিস্তানের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল থানি।

এদিকে রোববার আফগানিস্তানের জাতীয় সংহতি পরিষদের প্রধান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফগানিস্তানের প্রতি তার দেশের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সময় আফগানিস্তানে একটি অংশগ্রহণমূলক ও ব্যাপকভিত্তিক সরকার গঠনের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয় বলে তিনি জানান।

আফগানিস্তানের তালেবানের ওপর যেসব দেশের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কাতার অন্যতম। তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার যে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির ভিত্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে সেই চুক্তিও কাতারে স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া, বিদেশে থাকা তালেবানের একমাত্র কার্যালয়টিও কাতারে অবস্থিত।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে তালেবান। দেশটির নতুন এই সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। কোনো নারীর স্থান না হওয়া নতুন এই সরকারে এমন সব জ্যেষ্ঠ ও কট্টরপন্থি তালেবান নেতাদেরকে স্থান দেওয়া হয়েছে, যারা গত দুই দশক ধরে দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর ওপর জঘন্য সব হামলা পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত।

আফগানিস্তানের নতুন সরকারের প্রধান হলেও মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ জাতিসংঘের কালো তালিকায় রয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে তালেবানের প্রথম দফার সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ওই সময়ে তালেবান সরকারে দায়িত্ব পালন করার কারণেই তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ।

অবশ্য বিশ্বের কোনো দেশই এখন পর্যন্ত তালেবানের এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে কাবুলের ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

টিএম