বাইডেন প্রশাসনকে ইসরায়েলি সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র যদি ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা সমূহ বিপদের কারণ হতে পারে বলে বাইডেন প্রশাসনকে সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর প্রধান আমির কোহাভি।
মঙ্গলবার ইসরায়েলের তেল আবিবে আমির কোহাভি জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইরানবিষয়ক সামরিক পরিকল্পনায় পরিবর্তন প্রস্তাব করেছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। এ পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে চাইলে তা উল্টো বিপদ বয়ে আনতে পারে।
বিজ্ঞাপন
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজে এক আলোচনা সভায় এ সম্পর্কে ইরানের পরমাণু প্রকল্প ফের শুরু করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে ইসরায়েলের সেনাপ্রধান বলেন,‘ (ইরানের) সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিশদ বিশ্লেষণের পর আমি দেশের সামরিক বাহিনীকে ইরান বিষয়ক সামরিক পরিকল্পনায় নতুন কিছু বিষয় অন্তভূক্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। নতুন এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে কিনা – রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তার সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এরপরই ইরানের সঙ্গ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে আগ্রহী বাইডেন প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কিংবা চুক্তি নবায়নের পরিকল্পনা যদি যুক্তরাষ্ট্র করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কৌশলগত দিক থেকে এই পদক্ষেপ হবে খুবই ভুল এবং বাজে একটি ব্যাপার।’
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের পেছনে যে দেশটির সরকারের সমর্থন রয়েছে, দৃশ্যত তার কথাবার্তাতেই সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে; কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী - দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ইতিহাসে তা বিরল।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি, যাকে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন তৎকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা, সেখানে ইরানকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল- পরমণু প্রকল্প থেকে সরে এলে দেশটির ওপর থেকে একে একে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। সে সময় এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে দেশটির বের হয়ে যাওয়া নিশ্চিত করেন, তখন তাকে স্বাগতও জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানো ইত্যাদি সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদ মাধ্যমে।
ট্রাম্পের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয় যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে সংকট নতুন রূপ নেয়, দেশে দেশে হামলা ও সেনা অভিযান বেড়ে যায়। অন্যদিকে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ দেওয়ার নীতি গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে একের পর এক শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে ট্রাম্প প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনের পর গত ডিসেম্বরে জো বাইডেন বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্তি দেখা দিয়েছে, একের পর এক দেশ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অসুস্থ প্রতযোগিতায় নেমেছে, তা থেকে উত্তরণের সবচেয়ে আদর্শ উপায় হলো ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়া।
বাইডেনের এই মন্তব্য ইসরায়েল কর্তৃপক্ষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় বলে জানিয়েছেন দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষক ত্রিতা পার্সি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার আগেই নেতানিয়াহু সরকারের প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে দেখা করে চুক্তিতে না ফেরার ব্যাপারে তাকে চাপ দিয়েছিলেন।’
পার্সি আরো বলেন, ‘ওই সাক্ষাতকার প্রকাশের পর নেতানিয়াহুর একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে যুদ্ধে জড়ানো ছাড়া ইসরায়েলের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।’
তবে এখন পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসনের গতি প্রকৃতিতে দৃশ্যত যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ইরানের ব্যাপারে ‘ধীরে চলো’ নীতিই গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত সপ্তাহে সিনেট শুনানিতে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ঐতিহাসিক সেই চুক্তির মেনে চলার ব্যাপারে ইরান আগ্রহী কিনা তা পর্যবেক্ষণ এবং যুক্তরাষ্ট্র সেই চুক্তিতে ফিরবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরো বেশ কিছু সময়ের প্রয়োজন।
এসএমডব্লিউ