চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চেষ্টা এবং অর্থ পাচারের দায়ে হংকংয়ের স্বাধীনতাকামী একটি গোষ্ঠীর নেতা টনি চুংকে ৪৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার হংকংয়ের একটি জেলা আদালত সেখানকার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী ‘স্টুডেন্টলোকালিজম’র ওই নেতাকে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

গত বছরের অক্টোবরে চীনের আরোপিত ব্যাপক বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় হংকংয়ের স্বাধীনতাকামী নেতা টনি চুংয়ের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতার চেষ্টা ও অর্থ পাচারের অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই সময় আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন।

একই সময়ে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, হংকংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটের কাছের একটি কফি শপ থেকে অন্য দু’জনের সঙ্গে টনি চুংকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যান। সেই সময় তিনি বিদেশে আশ্রয়ের আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

বিচ্ছিন্নতার চেষ্টা এবং অর্থ পাচারের একটি অভিযোগ স্বীকার করে হংকং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দর কষাকষি করেছিলেন চুং। তবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং অর্থ পাচারের অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন তিনি। দোষ স্বীকারের কারণে তার বিচ্ছিন্নতার চেষ্টার জন্য ৪০ মাস এবং অর্থ পাচারের দায়ে ১৮ মাসের সাজার মেয়াদ ২৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন আদালত। এর ফলে এখন তাকে ৪৩ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

হংকংয়ের জেলা আদালতের বিচারক স্ট্যানলি চ্যান বলেছেন, তিনি দেশকে সক্রিয়ভাবে ভাঙার জন্য লোকজনকে সংগঠিত করা, পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছিলেন।

আদালতের বিচারক ইভান চেউং বলেছেন, অভিযুক্ত টনি চুং যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠন স্টুডেন্টলোকালিজমের শাখার ফেসবুকের একটি পেইজের প্রশাসক। এছাড়া ইনিশিয়েটিভ ইনডিপেনডেন্স পার্টি নামের একটি সংস্থা পরিচালনা করতেন তিনি।

বিচারকরা বলেছেন, গ্রেফতারের সময় চুংয়ের বাসভবন থেকে স্বাধীনতার পক্ষের টি-শার্ট, পতাকা এবং বই উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া পেপালের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

গত বছরের জুনে চীনের বেয়ারা এই অঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারির আগে সেখানকার কর্তৃপক্ষ অন্যান্য সরকারবিরোধী সংগঠনের মতো স্টুডেন্টলোকালিজমকে ভেঙে দেয়। বিদ্রোহ, বিচ্ছিন্নতা, সন্ত্রাসবাদ এবং বিদেশী বাহিনীর সাথে সম্পর্কের কারণে এসব সংগঠনের নেতার আজীবন কারাবাসের শাস্তির শঙ্কা রয়েছে।

হংকংয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী স্বাধীনতায় সমর্থন করে না; এ ধরনের প্রচারণাকে বেইজিং অসম্মানজনক হিসেবে মনে করে। গত বছর বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারির সাথে সাথে স্বৈরাচারী রূপে হাজির হয় হংকং।

সেখানকার অধিকাংশ গণতন্ত্রকামী রাজনীতিক বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন অথবা স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেছেন। কয়েক ডজন নাগরিক সমাজের সংগঠন তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে এবং কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হংকং ছেড়ে চলে গেছে।

নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার হরণের অভিযোগ অস্বীকার করে চীনা এবং হংকং কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাজপথে ২০১৯ সালের গণ-বিক্ষোভের পর স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য এই আইনের প্রয়োজন ছিল।

অধিক স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতিতে সাবেক ব্রিটিশ এই ঔপনিবেশ ১৯৯৭ সালে চীনের শাসনে ফিরে আসে। গণতন্ত্রকামী মানবাধিকারকর্মী ও কিছু পশ্চিমা সরকার বলেছে, চীন সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে। যদিও বেইজিং এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস