করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ফাইজারের সহ-নির্মাতা এবং বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উগুর শাহিন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই পরামর্শ দেন বলে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে উগুর শাহিন বলেন, করোনা টিকা নেওয়ার পরও অনেক মানুষ ভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেও তারা সম্ভবত গুরুতর অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।

গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপরই তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একজন বিশেষজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনার বি.১.১.৫২৯ নামক এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এমনকি করোনার এই ধরন মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্রিক বর্ণমালার ১৫ নম্বর অক্ষর অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ওমিক্রন’ নাম দিয়েছে। পরে ওমিক্রন নিয়ে সৃষ্ট আতঙ্কে আফ্রিকার দেশগুলোর বিরুদ্ধে একে একে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে বিশ্বের বহু দেশ।

বৈশ্বিক এই উদ্বেগের মধ্যেই আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উগুর শাহিন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মানুষের উদ্দেশে আমাদের বার্তা হচ্ছে- আতঙ্কিত হবেন না। (মহামারিকে হারানোর) পরিকল্পনা আগের মতোই আছে। করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার গতি আরও বাড়িয়ে দিতে হবে।’

তিনি বলছেন, ফাইজারের টিকা নেওয়ার পরও যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ঠেকাতে এই টিকা তার কার্যকারিতা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে। তার ভাষায়, ‘ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ফাইজারের টিকা কার্যকর বলে আমাদের বিশ্বাসের মূলে রয়েছে বিজ্ঞান।’

এর আগে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত সোমবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি উদ্বেগের হতে পারে, কিন্তু এটি মোটেই আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো কারণ নয়।

ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্টের ভাষায়, ‘আপনি যদি টিকা নেওয়ার পরও করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে নিন। আর আপনি যদি টিকাই না নিয়ে থাকেন, তাহলে টিকা নিয়ে নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে নিন।’

গত ২৮ নভেম্বর ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দেওয়া আপডেটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে সহজেই ওমিক্রন ভ্য়ারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ আরও গুরুতর আকার ধারণ করে কি না, সেটিও এখনও জানা যায়নি।

এছাড়া যারা আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের ফের ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রেও যতটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেটিও অত্যন্ত সীমিত।

টিএম