করোনাভাইরাসের গুরুতর উপসর্গে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের চিকিৎসার জন্য গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের তৈরি একটি ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল এই কোম্পানি বলেছে, তাদের তৈরি ওষুধটি করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর।

ব্রিটেনের ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমএইচআরএ) বলেছে, কোভিড-১৯ এর মৃদু থেকে মাঝারি সংক্রমণে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি অথবা মৃত্যু এবং যাদের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি রয়েছে; তাদের সেই ঝুঁকি কমাতে সোট্রোভিম্যাব নামের অ্যান্টিবডিটি নিরাপদ এবং কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ক্লিনিক্যালপূর্ব তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের মূল মিউটেশনের বিরুদ্ধে ওষুধটি কার্যকর।’

এতে বলা হয়েছে, ‘আজ পর্যন্ত সোট্রোভিম্যাব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তালিকাভুক্ত উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সফলতা দেখিয়েছে।’

ওমিক্রনের সব ধরনের মিউটেশনের বিরুদ্ধে সোট্রোভিম্যাবের নিস্ক্রিয়করণ কার্যক্রম নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে পরীক্ষা চলমান রয়েছে। পরীক্ষার ফল চলতি বছরের শেষের দিকে পাওয়া যাবে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ব্রিটিশ এই ওষুধ কোম্পানি।

এমএইচআরএ বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ-ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে সোট্রোভিম্যাবের এক ডোজ হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক বীর বায়োটেকনোলজির সঙ্গে যৌথভাবে ওষুধটি তৈরি করেছে ব্রিটেনের গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন। সোট্রোভিম্যাব মূলত মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি চিকিৎসা; যা এক ধরনের প্রোটিন। আর এই প্রোটিন করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত থাকে। ফলে করোনাকে মানুষের শরীরের কোষে প্রবেশের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

ওমিক্রন ফাঁকি দিতে পারে ইমিউনিটি

এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকদের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন কিছু ইমিউনিটিকে পরাস্ত করতে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিনগুলো এখনও এই ভ্যারিয়েন্টের গুরুতর অসুস্থতার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।

শনাক্ত হওয়ার চার সপ্তাহেরও কম সময়ে করোনাভাইরাসের ব্যাপক রূপান্তরিত এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত আধিপত্য বিস্তারকারী হয়ে উঠছে। প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের আগের সব ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশটির ৯টি প্রদেশের অন্তত ৫টিতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে এবং এটি এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার দেশটিতে ৪ হাজার ৩৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হলেও বুধবার সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৮ হাজার ৫৬১ জনে পৌঁছেছে।

তবে তাদের মধ্যে কতজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। পরীক্ষাকৃত সব নমুনার এখনও জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়নি। তবে দেশটির সরকারি প্রতিবেদন বলছে, দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ‘দ্রুত আধিপত্যশীল’ হয়ে উঠছে।

দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) বলছে, গত নভেম্বরে দেশটিতে ২৪৯টি জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। এতে ৭৪ শতাংশেরই ওমিক্রন ধরা পড়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ওমিক্রনের প্রোফাইল এবং মহামারিবিষয়ক আগাম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে এই ভ্যারিয়েন্ট মানুষের শরীরের কিছু ইমিউনিটিকে ফাঁকি দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলো এখনও এই ভ্যারিয়েন্টে গুরুতর অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে।

সূত্র: এএফপি।

এসএস