বিশ্বের ছয় শক্তিধর দেশের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির বিষয়ে নতুন কোনো আলোচনা বা চুক্তিতে নতুন কোনো দেশের অংশগ্রহণ প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। তেহরানের সঙ্গে নতুন কোনো আলোচনা হলে সেটাতে সৌদি আরবকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে- ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর এমন মন্তব্যের পর নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল দেশটি।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ বলেছেন, ‘২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত তেহরান পরমাণু চুক্তিটি বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি। এছাড়া চুক্তিটি ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মাধ্যমে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কতৃক অনুমোদিত। এখানে (নতুন করে) আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই এবং চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর নাম পরিষ্কার ও তাতে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।’

২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত রাখতে বাধ্য হয় ইরান। কিন্তু ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে একক সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে সম্প্রতি ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দেশটি।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রই পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে, করোনা পরিস্থিতিতেও ইরানে ওষুধ আমদানিতে বাধা দিচ্ছে এবং পরমাণু সমঝোতা বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে।

এ অবস্থায় পরমাণু সমঝোতা রক্ষায় কোন দেশ আগে পদক্ষেপ নেবে সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির ব্যর্থতার কথা আশা করি ভুলে যাবেন না।

গত বৃহস্পতিবার এক টুইটবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে উদ্দেশ্য করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একবার অতীত স্মরণ করুন জনাব ব্লিনকেন, জ্যাকোপা থেকে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গিয়েছিল, ইরান নয়।’

একক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ইরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে এখনও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ইরানে খাদ্য, ওষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্রবেশ করতে পারছে না উল্লেখ করে সেসময় জাভেদ জারিফ বলেছিলেন, ‘এখন বলুন, চুক্তিতে ফেরার ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ কার নেওয়া উচিত?’

জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ'র পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন- সে ব্যাপারেও তখন সম্মতি দিয়েছিল তেহরান।

কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।

পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানো ইত্যাদি সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমে।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম