জাপানের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুহিদে নাকায়ামা

অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়ায় যদি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের প্রতাপশালী সেনা জেনারেলদের সঙ্গে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো যোগাযোগের চ্যানেল বন্ধ করে দেয়; তাহলে সেই পদক্ষেপ মিয়ানমারকে চীনের কাঁধে ভর করার জন্য ঠেলে দিতে পারে। মঙ্গলবার এভাবেই বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে মিয়ানমারের অভ্যুত্থান পরবর্তী কার্যকলাপের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন জাপানের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুহিদে নাকায়ামা। 

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‌‘আমরা যদি এটি ভালোভাবে মোকাবিলা না করি, তাহলে মিয়ানমার আরও রাজনৈতিকভাবে মুক্ত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে দূরে সরে গিয়ে ‌‘লীগ অব চায়নায়’ যোগ দিতে পারে।’ মিত্রদের সঙ্গে সাধারণ একটি কৌশলের ব্যাপারে জাপানেরও আলোচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার ভোরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নিয়ে দেশজুড়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করেছে। একই সঙ্গে গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) জালিয়াতি করেছে অভিযোগ এনে দলটির নেত্রী অং সান সু চিসহ সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের আটক করে সেনাবাহিনী।

মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদসংস্থা এপিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিয়ানমারের একজন আইনপ্রণেতা বলেছেন, রাজধানী নেইপিদোর একটি উন্মুক্ত বন্দি শিবিরে ৪০০ জন আইনপ্রণেতাকে আটকে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে তাদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজধানীতে আইনপ্রণেতাদের গৃহবন্দি করে রাখা হলেও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে কোথায় রাখা হয়েছে সেবিষয়ে সেনাবাহিনী কিংবা ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি কোনও তথ্য দেয়নি।

নাকায়ামা বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জাপানের যেসব অংশীদারিত্বমূলক কর্মসূচি রয়েছে; সেগুলো স্থগিত করা হলে তাতে চীনের প্রভাবেরই জয় হবে এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে।

মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও অন্যতম প্রধান দাতা জাপান অং সান সু চি এবং বেসামরিক সরকারের সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি এবং দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। 

তিনি বলেছেন, ‘আমরা থেমে গেলে চীনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। তারা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ থেকে দূরত্ব আরও বৃদ্ধি করবে। যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে বলে আমি মনে করি।’

২০১৪ সাল থেকে দেশে সেমিনার এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাদের সমুদ্রতলে ওষুধ, দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম এবং জাপানি ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এছাড়াও দুই দেশের মাঝে শিক্ষা কর্মসূচিও চলমান রয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে জাপানের ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর আটজন ক্যাডেট পড়াশোনা করছেন।

চীনের ব্যাপারে জাপানের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুহিদেকে প্রায়ই সমালোচনা করতে দেখা যায়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের লাগাম টানতে গত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সঙ্গে এই অঞ্চলের সুরক্ষা সক্ষমতা তৈরির কৌশল নিয়ে কাজ করছে জাপান।

জাপানি এই মন্ত্রী বলেছেন, সমুদ্রে উপকূলরক্ষী বাহিনীকে বিদেশি যানে সরাসরি গুলির অনুমতি দিয়ে বেইজিং আইন পাসের পর তিনি সমুদ্রে চীনের কর্মকাণ্ড সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন।

সূত্র: রয়টার্স।

এসএস