বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানবদেহে শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে চলতি মাসের ৭ তারিখে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন রোগীর দেহে জেনেটিকালি রূপান্তরিত একটি শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। তবে চাইলেই তারা এ অস্ত্রোপচার করতে পারেনি। এর জন্য তাদের যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা তদারকি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়েছে। কারণ মানব হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত ছিলেন না ওই রোগী। 

এ অস্ত্রোপচারের বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ বলছেন, হৃদরোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা ভুগছেন, যারা মানব হৃদপিণ্ড গ্রহণ করতে পারবেন না বা ট্রান্সপ্লান্টের জন্য সময় মতো হৃদপিণ্ড পাননি তাদের একটা সুযোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকে এই আয়োজন। এটা বাস্তবায়ন হলে যারা বছরের পর বছর হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছে, তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হবে। 

চিকিৎসকদের যে দলটি এই অস্ত্রোপচার করেছে, তারা বহু বছর ধরেই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছিল। তারা মনে করেন, এই অস্ত্রোপচার সফল হলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবন বদলে যাবে। 

ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর মহিউদ্দিন রহমান বলছেন, এটা নিশ্চিতভাবেই বাস্তবতা বদলে দেবে। কারণ এই পদ্ধতি যদি কাজ করে, তাহলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সহজেই পাওয়া যাবে। সারা বিশ্বে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ রয়েছে যারা অঙ্গের জন্য অপেক্ষা করছে আর এই রোগীর মতোই প্রতিস্থাপনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হচ্ছেন না। জিনোগ্রাফট যদি সহজলভ্য হয় এবং রোগীদের দেহে প্রতিস্থাপন করতে যদি অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে সেসব রোগী হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে এবং নিজেদের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে। 

এ ঘটনাকে অনেকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিলেও মানবদেহে শূকরের হার্ট প্রতিস্থাপন নৈতিকভাবে কতটা সমর্থনযোগ্য- সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। 

একদিকে যেমন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শূকরের অঙ্গ ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে অন্যদিকে প্রাণী অধিকারের বিষয়টিও সামনে আনছেন অনেকে। 

ইসলাম ও ইহুদি ধর্মে শূকর পালন বা খাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নে শূকরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে বলে বলছেন ধর্ম বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। 

মিসরের ধর্মীয় বিধি আরোপের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দার আল-ইফতা এক ফতোয়ায় বলেছে, জীবনের ঝুঁকি, অঙ্গহানির সম্ভাবনা বা অতিরিক্ত স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা থাকলে শূকরের হৃৎপিণ্ডের ভালভ ব্যবহার করার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। 

লন্ডনের ইহুদি পাদ্রি ড. মোশে ফ্রিডম্যান বলছেন, জরুরি প্রয়োজনে মানবদেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড ব্যবহার করা ইহুদি আইনের পরিপন্থি নয়, কারণ ইহুদি ধর্মের প্রাথমিক দর্শন মানবজীবন রক্ষা করা। 

আবার বিষয়টি অনৈতিক বলছে প্রাণি অধিকার নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংগঠন। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োএথিকসের গবেষক ক্যাটরিয়েন ডেভলডার মন্তব্য করেন, জেনেটিক্যালি রূপান্তরিত শূকরের অঙ্গ আমরা ব্যবহার করতে পারি, যদি নিশ্চিত করা যায় যে শূকরগুলো অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে না।   

মানবদেহে পশুর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পদ্ধতি এখনও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নয়। অতীতে অনেক ক্ষেত্রেই  পশুর অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনের পর রোগীর মৃত্যু  বা অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে চিকিৎসকদের অনেকে মনে করেন, এ পদ্ধতিতে ঝুঁকি থাকলেও রোগীকে ঝুঁকির বিষয়ে অবহিত করে তার অনুমতি নিয়ে এই পদ্ধতি চলমান রাখা প্রয়োজন। 

সূত্র : বিবিসি। 

এনএফ