চলতি বছরের ১ মে’র মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন, তা পিছিয়ে বর্তমানে দেশটির সরকার ও তালেবান গোষ্ঠীর মধ্যে যে শান্তি আলোচনা চলছে, সেখানে মনযোগ দেওয়ার সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন জমা পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসে। স্থানীয় সময় বুধবার ‘আফগানিস্তান স্টাডি গ্রুপ’ নামে কংগ্রেস মনোনীত একটি সংগঠন এই প্রতিবেদন দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন সৈন্যদলের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড এবং কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সাবেক রিপাবলিকান সদস্য কেলি আয়োটি যথাক্রমে এই সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। বুধবারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ‘সময় আসেনি’।

এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ প্রায় তিন দশকের গৃহযুদ্ধ শেষে শান্তি আলোচনায় বসেছে আফগানিস্তান সরকার এবং দেশটির কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠী তালেবান; কিন্তু এর পাশাপাশি চোরাগুপ্তা হামলায় প্রাণও হারাচ্ছেন দেশটির বেসামরিক মানুষজন। আফগানিস্তান বিষয়ে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত বিভিন্ন নীতির কড়া সমালোচনাও করা হয় প্রতিবেদনে।

সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন তালেবান গোষ্ঠীকে ‘অতিরিক্ত ছাড় দিয়েছিল’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা প্রত্যাহারের যে সময়সীমা ট্রাম্প প্রশাসনের সময় নির্ধারণ ‍করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তা ছিল একটি বড় রকমের ‘ভুল সিদ্ধান্ত’। আরো বলা হয়, আফগানিস্তানের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে যুক্তরাষ্ট্র যদি সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, সেক্ষেত্রে পুনরায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে দেশটিতে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলে আবারও আল কায়েদাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর তৎপরতাও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আফগান স্টাডি গ্রুপের কো চেয়ারম্যান জোসেফ ডানফোর্ড সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কংগ্রেসে জমা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দফতরেও পাঠানো হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, আফগানিস্তান বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা, সহিংসতা-সংঘাত ও বেসামরিক লোকজনদের ওপর হামলা নিবৃত্ত করা, আল কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তালেবানদের সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং চলমান শান্তি সংলাপকে এগিয়ে নেওয়া।

গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। সেই চুক্তিতেই উল্লেখ করা ছিল বর্তমান এই সময়সীমা।

নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তালেবানদের; তড়িঘড়ি করে সেনা প্রত্যাহার কার হলে ওই অঞ্চলে সংঘাত বেড়ে যেতে পারে; তবে ট্রাম্প তাতে কর্ণপাত করেননি।

এদিকে যু্ক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় তালেবান গোষ্ঠী জানিয়েছিল, আফগানিস্তানে কোনও আল কায়েদার কোনও সদস্য নেই; এবং যদি মে মাসের এক তারিখের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার সব সেনা প্রত্যাহার করে না নেয়, সেক্ষেত্রে আফগানিস্তানে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা ‘বিঘ্নিত’ হতে পারে।

তবে বুধবারের প্রতিবেদনের পর কার্যত ঝুলে গেল ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আফগান সরকারের মধ্যকার সেনা প্রত্যাহার বিষয়ক চুক্তি। জোসেফ ডানফোর্ড এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রায় তিন দশক ধরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদল অবস্থান করছে। আমাদের মূল লক্ষ্য দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা-কর্মক্ষেত্র ও সমাজে আফগান নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আফগানিস্তানে এই মূহুর্তে যে পরিস্থিতি, তাতে এখন এই বিষয়গুলোর প্রতিই আমাদের মনযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ