জনরোষ দমাতে মিয়ানমারে ফেসবুক বন্ধ
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বার্তা আদান-প্রদানের বেশ কয়েকটি অ্যাপ ও সাইট বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমার। অভ্যুত্থানবিরোধী ক্ষোভ বৃদ্ধি ও ফেসবুকে সামরিক সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানানোর পর বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির জান্তা সরকার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ফেসবুক মিয়ানমারে খুবই জনপ্রিয়। এটা তাদের যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যমও বটে। এছাড়া বিবৃতি ও আদেশ জারির ক্ষেত্রে মিয়ানমারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত সরকারও ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিভিন্ন আদেশ ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতো।
বিজ্ঞাপন
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাত থেকে ফেসবুকে প্রবেশ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যার সম্মুখীন হন মিয়ানমারের মানুষ। এছাড়া দেশটির মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিনর মিয়ানমার এক বিবৃতিতে বলেছে, ফেসবুকে প্রবেশ ও ব্যবহার সাময়িক ভাবে ব্লক করতে দেশের সকল মোবাইল ফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞাপন
নরওয়েজিয়ান টেলিনর গ্রুপের অংশ টেলিনর মিয়ানমার অবশ্য দেশটির জান্তা সরকারের এই আদেশ মেনে চলবে বলে জানিয়েছে। যদিও সংস্থাটি বলছে, সামরিক সরকারের এই আদেশ মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
এর আগে বুধবার সকাল থেকেই মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় ফেসবুক ব্যবহারে গ্রাহকরা সমস্যার মুখে পড়ছেন বলে জানিয়েছিল বার্তাসংস্থা এএফপি।
এ বিষয়ে ফেসবুকের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ফেসবুক সামরিয়কভাবে বন্ধ করতে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির মানুষ যেন তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারে, সেজন্য ফেসবুক ব্যবহার স্বাভাবিক রাখতে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।’
‘নেটব্লকস’ নামে একটি সংস্থা বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বিভ্রাটের বিষয়ে নজরদারি করে থাকে। সংস্থাটি বলছে, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপ এবং সাইটগুলোতে প্রবেশ ব্লক করে দিয়েছে মিয়ানমারের ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে নেটব্লকস জানিয়েছে, ‘সামাজিক মাধ্যমগুলোর ব্যবহার বন্ধে কঠোর আদেশ পাওয়ার পর ফেসবুকসহ অন্য কয়েকটি সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চি’র সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, অং সান সু চিসহ আটক করা হয় অনেক শীর্ষ নেতাকে। এছাড়া একযোগে ২৪ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকেও অপসারণ করে অভ্যুত্থানকারীরা। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি)।
বিবিসি বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে মঙ্গলবার রাতে ইয়াঙ্গুনের প্রতিটি সড়কের বাসিন্দারা তাদের ঘর থেকেই হাড়ি-কড়াই ও বাসনে শব্দ করতে থাকেন এবং অনেকে রাস্তা থেকে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে সেই প্রতিবাদে শামিল হন।
এছাড়া বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এ বিষয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং তাদের এই প্রচারণায় এক লাখেরও বেশি মানুষ ‘লাইক’ দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ফেসবুকে অভ্যুত্থানবিরোধী প্রচারণা ও নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির বর্তমান জান্তা সরকার।
সূত্র: এপি, রয়টার্স, আলজাজিরা
টিএম