পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছানোর স্বপ্ন নিয়ে ২০২১ সালের গ্রীষ্মে ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের হাজারো অভিবাসী লিথুয়ানিয়া ঢোকেন বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে। এরপর ছয় মাস কেটে গেছে, তবে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এখন তারা লিথুয়ানিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি।  

এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা লিথুয়ানিয়ার নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। 

ইরাক, সিরিয়া ছাড়াও আফ্রিকান দেশে কঙ্গো (ডিআরসি) ও ক্যামেরুন থেকে আসা এই অভিবাসীরা জানেন না কবে তারা ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাবেন। আবার লিথুয়ানিয়াও এই অভিবাসীদের ক্যাম্পে আটকে রাখার মেয়াদ ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করতে চায়। 

এই অভিবাসীদের বর্তমান অবস্থা তুলে এনেছে ইনফো মাইগ্র্যান্টস। 

সামনে কী আছে জানেন না 
লিথুয়ানিয়ার ক্যাম্পে আটকে পড়া অভিবাসীদের একজন হলেন ডিআরসি কঙ্গো থেকে আসা মামাদু (ছদ্মনাম)। বেলারুশে বিদেশি ছাত্র হিসেবে ছিলেন তিনি।  

মামাদুকে প্রথমে নেওয়া হয়েছিল লিথুয়ানিয়ার ভেরেবিয়াজের একটি পুরোনো জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ে; যেটিকে অভিবাসীদের আটককেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে দু’মাস রেখে পরে তাকে নেওয়া হয় বেলারুশিয়ান সীমান্ত ঘেঁষা মেদিনিনকাইয়ের একটি কেন্দ্রে। 

ইনফো মাইগ্র্যান্টসকে মাদুদো বলেছেন, আমরা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দি রয়েছি। কাউকে বন্দি করে রাখা হলে তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়, হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়। আমরা সবাই-ই চেষ্টা করি যেন মেজাজ ধরে রাখতে পারি।  

তিনি আরও বলেন, এখানে অল্প খাবার দেওয়া হয়। আমার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গেছে। সারাদিন যেন দুর্বল না হই সেজন্য চিনি খেতে হয় আমাকে। 

লিথুয়ানিয়া থেকে তার আশ্রয়ের আবেদন এবং আপিল দুটিই প্রত্যাখ্যান হয়ে যাওয়ার পর এখন তিনি জানেন না সামনে কী আছে। 

কঙ্গো থেকে আসা আরও একজন আছেন এই ক্যাম্পে। তাকে অবশ্য প্রথমে নেওয়া হয়েছিল লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াস থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ভিডেনাই নামে একটি গ্রামের ক্যাম্পে।  

মেদিনিনকাই ক্যাম্পে যে খাবার খেতে দেওয়া হয় সেটা খেয়ে তার পেট ব্যথা হয় বলে জানান তিনি। এ জন্য তিনি অল্প রুটি খান কেবল।   

আশ্রয় পেয়েছি কারণ আমি সমকামী
৩ হাজার ১৮৯ জনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে মাত্র ৮৭ জনের লিথুয়ানিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। এই ৮৭ জনের একজন হলেন ইরাকি তরুণ কাদিম মাজিক। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতে বেলারুশ হয়ে বাগদাদ থেকে লিথুয়ানিয়ায় পৌঁছান তিনি। 

কাদিম বলেন, আমি সৌভাগ্যবান ইরাকিদের মধ্যে একজন যারা এখানে থাকার বৈধতা পেয়েছে। আমার আবেদন বৈধ হওয়ার প্রধান কারণ হলো আমি একজন সমকামী। ইরাকে বসবাস করা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমার পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে আমার অনেক সমস্যা ছিল।  

তিনি আরও বলেন, আগের চেয়ে এখন ভালো আছি। খাবার কিনতে ও রান্না করতে প্রতি দুই সপ্তাহে ৪৫ ডলার করে দেওয়া হয় আমাদের। 

এনএফ