অনেক উঁচুতে একটানা অনেকদিন উড়ার সঙ্গে সমন্বিত হামলা চালাতে সক্ষম; ভারতের তৈরি এমন এক ড্রোনের ডিজাইন ও অগ্রগতি নিয়ে ২০১৭ সালের শুরুতে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল এনডিটিভি। ভারতীয় ওই টেলিভিশন জানাচ্ছে, বিগত চার বছরে ড্রোনটি তৈরির বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। একটানা ৯০ দিন উড়তে সক্ষম অত্যাধুনিক এই ড্রোন আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর বহরে যুক্ত হবে।  
 
ইনফিনিটি নামের সৌরশক্তিচালিত ওই ড্রোন টানা নব্বই দিনের জন্য ৬৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ক্রুজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এটি সিএটিএস বা কম্ব্যাট এয়ার টিমিং সিস্টেম নামে পরিচিত ভারতের মনুষ্যবিহীন সামরিক ড্রোন কর্মসূচির প্রধান অস্ত্র হবে।

প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সূত্র বলেছেন, ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে (ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০-৬০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী শূন্যস্থান বা আকাশ) পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত যুদ্ধসরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে আকাশ সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্মগুলোকে পরবর্তী ধাপে উন্নীত করবে এ ড্রোন।’

যে ড্রোন থেকে হামলা করা হবে সেখান থেকে ভূপৃষ্ঠে থাকা মনিটরিং স্টেশনে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার করতে সক্ষম হবে ইনফিনিটি।

ড্রোন তৈরির প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা ব্যাঙ্গালুরুভিত্তিক স্টার্টআপ ‘নিউস্পেস’ এর সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ভারতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই সামরিক ড্রোন তৈরির নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনোটিকস লিমিটেড’।

হিন্দুস্তান অ্যারোনোটেকিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘ইনফিনিটি’র ডিজাইন।

‘সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার’সহ নানা ধরনের সেন্সরের সমন্বয়ে তৈরি ড্রোন ‘ইনফিনিটি’ অনেক উঁচু অবস্থানে থেকেও নিচে অর্থাৎ ভূমিতে শত্রুপক্ষের এলাকায় লক্ষ্য করে ‘ভারতীয় ড্রোন সিস্টেম’র আওতায় সমন্বিত হামলা চালাতে সক্ষম হবে।

ভারতের দেশীয় ‘কম্ব্যাট এয়ার টিমিং সিস্টেম’র আওতায় থাকা ড্রোন সিস্টেম ‘দ্য ওয়ারিয়র লয়্যাল উইংম্যান’, ‘আলফা-এস সোয়ার্ম ড্রোনস’ অথবা ‘হান্টার ক্রুজ মিসাইল’ এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে হামলা চালানোর সক্ষমতা রয়েছে ‘ইনফিনিটি’র।

২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার ভিডিও পাওয়া যায়নি বলেই ওই হামলার সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

যে ড্রোন থেকে হামলা করা হবে সেখান থেকে ভূপৃষ্ঠে থাকা মনিটরিং স্টেশনে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার করতে সক্ষম হবে ইনফিনিটি। এতে করে মনুষ্যবিহীন ডোন থেকে চালানো হামলা সফল হলো কিনা তা মনিটরিং স্টেশন থেকেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণের সময় এমন ভিডিও পাওয়া যায়নি বলেই শত্রুপক্ষের শিবির লক্ষ্য করে যে হামলা চালানো হয়েছিল, তার সাফল্য নিয়ে ওই সময় বিতর্ক তৈরি হয়। ভারতের ওই মিশন নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছিল।

ইনফিনিটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্মার্ট সিটি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো নানান কাজে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যও সরবরাহ করবে।

হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিকস বলছে, ‘ইনফিনিটি’ শুধু সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে না এর আফ্রারেড ও ছবি তোলার পদ্ধতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্মার্ট সিটি ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো নানান কাজে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যও সরবরাহ করবে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সামুদ্রিক জলসীমায় নানান পর্যবেক্ষণ ও নজরদারির করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অত্যাধুনিক এই ড্রোন কাজে লাগাতে পারবে বলেও জানিয়েছে ড্রোনটির নির্মাতা হিন্দুস্তান অ্যারোনোটিকস কোম্পানি লিমিটেড।  

এএস