মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ ইয়েমেনে করোনা টিকার চালান পৌঁছাবে চলতি বছর মার্চ নাগাদ। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চলমান প্রকল্প কোভ্যাক্সের আওতায় ২ লাখ ৩০ হাজার টিকার ডোজ মার্চ মাসে দেশটিতে পাঠানো হবে।

ছয় বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষ ও নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া ইয়েমেনের চিকিৎসা কাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটির জনগণ এখন যতটুকু চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবা পাচ্ছেন তার ৯৫ শতাংশই সরবরাহ করছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসমূহ।

জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থা ইউনিসেফের ইয়েমেন শাখার প্রধান কর্মকর্তা ফিলিপ দুয়ামেলে এ বিষয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘কোভ্যাক্স প্রকল্পের মাধ্যমে ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের; আর এজন্য প্রয়োজন হবে ১ কোটি ৪০ লাখ ডোজ করোনা টিকা। এই টিকার প্রথম চালান হিসেবে ফেব্রুয়রির শেষভাগ বা মার্চের শুরুর দিকে ২ লাখ ৩০ হাজার ডোজ টিকা পাঠানো হবে বলে আমাদের জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।’

দেশটির সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ইয়েমেনের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এরমধ্যে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে জনগণের ২৩ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে; বাকিদের টিকার আওতায় আনতে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে সৌদি আরবের বাদশা সালমান মানবিক সহায়তা ও ত্রান কেন্দ্র (কেএসরিলিফ) বরাবর আবেদন জানানো হয়েছে ইয়েমেন সরকারে পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে সৌদি সরকারের তাৎক্ষনিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি; তবে গত মাসে দেশটির অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ইয়েমেনসহ বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন দেশে টিকা প্রস্তুত এবং পাঠানোর বিষয়টি সৌদি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

দুয়ামেলে জানান, মধ্যপ্রাচ্যের মরুদেশ ইয়েমেনের জলবায়ুগত অবস্থা বিবেচনা করে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়েই টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হবে দেশটিতে; কারণ এই টিকা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে বিশেষ রেফ্রিজারেটরের প্রয়োজন পড়ে না।

২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেন সরকার ও হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। বর্তমানে রাজধানী সানাসহ দেশটির দক্ষিণাংশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; অন্যদিকে দেশটির উত্তরাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।

দেশটির দক্ষিণাংশে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১২২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬১৫ জনের বলে জানিয়েছে ইয়েমেন সরকার। তবে উত্তরাংশে সংক্রমণ বিষয়ক কোনো তথ্য হুথি কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার- কেউই দেয় নি।

ইয়েমেনের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সরকারি তহবিলে যে অর্থ অবশিষ্ট রয়েছে- তা দিয়ে টিকা কিনে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করা এ মূহুর্তে একেবারেই অসম্ভব দেশটির জন্য।

এসএমডব্লিউ