মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ/ ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ-৭ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হান্নানসহ (এম এ হান্নান) আট জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার বর্তমান সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেন ময়মনসিংহ-৫ আসনের এ সংসদ সদস্য।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষ্য দেন কে এম খালিদ।

তিনি ট্রাইব্যুনালে পাক বাহিনীর নির্যাতনের বর্ণনা দেন এবং সাবেক এমপি হান্নানের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এ সময় প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন উপস্থিত ছিলেন।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলে ওইদিনই হান্নানকে গুলশানের বাড়ি এবং ছেলে রফিক সাজ্জাদকে ওই এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একইদিন গ্রেপ্তার করা হয় ডা. খন্দকার গোলাম সাব্বির, মিজানুর রহমান মিন্টু ও হরমুজ আলীকে।

ঢাকায় গ্রেপ্তার হন এম এ হান্নান ও তার ছেলে রফিক সাজ্জাদ। ময়মনসিংহ সদর ও ত্রিশাল থেকে গ্রেফতার হন বাকি তিন জন। আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার আনা প্রথম অভিযোগ হলো- ১৯৭১ সালের ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহের গোলকীবাড়ি বাইলেনের প্রখ্যাত ভাস্কর আব্দুর রশিদকে অপহরণ, নির্যাতনের পর জিপ গাড়ির পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নির্মমভাবে হত্যা ও লাশ গুম।

দ্বিতীয় অভিযোগ- একাত্তরের ২ অগাস্ট ত্রিশাল থানার বৈলর হিন্দুপল্লী ও মুন্সিপাড়ায় অগ্নিসংযোগ, সেন্টুকে গুলি করে হত্যা ও দুই হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে গুলি করে আহত, শহীদ আ. রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে হত্যার ঘোষণা।

তৃতীয় অভিযোগ- একাত্তরের ৭ থেকে ৯ অগাস্টের মধ্যে বৈলরের আ. রহমান মেম্বারকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুম। চতুর্থ অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে খন্দকার আব্দুল আলী রতনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা ও লাশ গুম।

পঞ্চম অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে মো. আবেদ হোসেন খানকে আটক, নির্যাতন ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর। এছাড়া ৭ থেকে ১০ অগাস্টের মধ্যে কে এম খালিদ বাবুকে অপহরণ, আটক ও নির্যাতন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামিরা ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, অভিযুক্ত এম এ হান্নান রামবাবু রোডের ৫৯ নং বাড়িকে ‘টর্চারসেল’ হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আসামিরা নতুন বাজারে অবস্থিত এম এ হান্নানের নিজ বাসভবন, জেলা পরিষদ ডাক বাংলো টর্চার সেলে নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করে মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ফেলে দিতেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আসামিদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ অঞ্চলে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমএইচডি/এফআর