পি কে হালদার

তিন হাজার ৬শ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আলোচিত পি কে হালদারকে ধরতে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের কাছে খুরশিদ আলম খান বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী পি কে হালদারকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টাপোলে পাঠানো হয়েছে।

দুদক আইনজীবী আরও জানান, পি কে হালদারের ৭০/৮০ জন গার্লফ্রেন্ডের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। আমরা সেসব অ্যাকাউন্ট অনুসন্ধান করছি।

এর আগে ৯ ডিসেম্বর বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারকে ইন্টাপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি জানাতে বলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার অগ্রগতিও জানতে চান আদালত। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

গত ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে 'পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে পরদিন ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন স্ব-প্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

গত ২১ অক্টোবর বিদেশে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) দেশে ফিরলেই আইনশৃঙখলা বাহিনীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।

এর আগে ২১ জানুয়ারি  প্রায় ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকা পাচার করার ঘটনায় প্রশান্ত কুমার হালদারসহ উনিশ জনের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। অন্যরা হলেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক জহিরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জী, পাপিয়া ব্যানার্জী, মোমতাজ বেগম, নওশেরুল ইসলাম, আনোয়ারুল কবির, প্রকৌশলী নরুজ্জামান, আবুল হাসেম, রাশেদুল হক, পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, স্ত্রী সুষ্মিতা সাহা, ভাই প্রিতুষ কুমার হালদার, চাচাতো ভাই অমিতাব অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডে বিনিয়োগকারী দুই জনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে লোপাট করেছেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

নাম প্রশান্ত কুমার হালদার, সংক্ষিপ্ত রূপ যার পি কে হালদার। প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এমন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ইত্যাদি।

অভিযোগ রয়েছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন ও নতুন আরও কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাত এবং বিদেশে পাচার করেছেন পি কে হালদার। নিজেও পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে মামলা করার আগেই লাপাত্তা পি কে হালদার।

এমএইচডি/এসএম