খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী গুলশানের যে বাড়িতে বাস করছেন সেটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ওই বাড়িটি দখলে নিয়েছেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্লটটি সরকারের অনুকূলে আনতে এবং জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে কমিটি।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনের অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়িটি নিয়ে রিটের শুনানির জন্য আগামীকাল দিন ধার্য রয়েছে। বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।

তদন্ত কমিটি বলেছে, বাস্তবে ওই এলাকায় রাজউকের লে-আউট নকশায় কথিত বাড়ির অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই। এ ক্ষেত্রে সুকৌশলে ওই এলাকার ১০৪ নং রোডে অবস্থিত ওই বাড়িটি ১০৩ নং রোড দেখিয়ে জাল-কাগজপত্র সৃজনপূর্বক হস্তান্তর-নামজারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অধিশাখা-৯ এর যুগ্ম-সচিব মো. মাহমুদুর রহমান হাবিবকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং শাখা-১১ এর উপসচিব জহুরা খাতুন। দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ওই কমিটি গঠন করে দেয়।

আরও পড়ুন >> বিচার চাইতে হাইকোর্টে সালাম মুর্শেদীর মেয়ে ব্যারিস্টার ঐশী

এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরেজমিন পরিদর্শন ও গুলশান আবাসিক এলাকার লে-আউট নকশা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রোড নং ১০৪ ও রোড নং ১০৩-এর সংযোগস্থলের কর্নারের প্লট/বাড়িটি (২৭ নং প্লট) অবস্থান বিবেচনায় ১০৪ নং রাস্তায় অবস্থিত। যা ১৯৮৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত ৯৭৬৪ (১) নং পৃষ্ঠার ৪৬ নং ক্রমিকে ‘খ’ তালিকাভুক্ত পরিত্যক্ত বাড়ি।

অর্থাৎ ঢাকার গুলশান আবাসিক এলাকার গুলশান সিইএন (ডি) ব্লকের ১০৪ নং রোডের ২৯ নং হোল্ডিংয়ের ২৭ নং বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সর্বশেষ জরিপ/সিটি জরিপে সংশ্লিষ্ট এলাকার সিইএন (ডি) ব্লকের ২৭ নং প্লটের ৫২০৪ ও ৫২০৫ দাগসমূহ সিটি জরিপের ৯ নং খতিয়ানভুক্ত, যা সরকারের পক্ষে গণপূর্ত নগর উন্নয়ন বিভাগ ঢাকার নামে রেকর্ডভুক্ত।

মালেকা রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ২৮-এর মূলে তার বরাবর প্রেরিত পত্রে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়ি নং-সিইএন (ডি) ২৭, হোল্ডিং নং-২৯, রোড নং-১০৩, ঢাকার বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘ক’ ও ‘খ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং অবমুক্তির কোনো অবকাশ নেই

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মালেকা রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ২৮-এর মূলে তার বরাবর প্রেরিত পত্রে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়ি নং-সিইএন (ডি) ২৭, হোল্ডিং নং-২৯, রোড নং-১০৩, ঢাকার বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘ক’ ও ‘খ’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং অবমুক্তির কোনো অবকাশ নেই। 

তদন্ত কমিটি বলেছে, বাস্তবে ওই এলাকায় রাজউকের লে-আউট নকশায় কথিত বাড়ির অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই। এ ক্ষেত্রে সুকৌশলে ওই এলাকার ১০৪ নং রোডে অবস্থিত ওই বাড়িটি ১০৩ নং রোড দেখিয়ে জাল-কাগজপত্র সৃজনপূর্বক হস্তান্তর-নামজারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন >> আমি আওয়ামী লীগের দালাল : ব্যারিস্টার সুমন 

এর আগে ১ নভেম্বর সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ সম্পত্তি সম্পর্কিত সব কাগজপত্র ১০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গণপূর্ত বিভাগ ও সালাম মুর্শেদীকে নির্দেশ দেন আদালত।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সে অনুযায়ী গত ১৩ নভেম্বর সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সম্পর্কিত কাগজপত্র হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। ওই দিন সালাম মুর্শেদীর পক্ষে কাগজপত্র দাখিল করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। 

উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে রিট করেন। রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

এমএইচডি/এসকেডি