ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

ব্যারিস্টার মিতি সানজানা। বাংলাদেশের একজন সফল আইনজীবী। তিনি লিগ্যাল কাউন্সেলের পার্টনার। একাধারে কলামিস্ট ও জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিত। নারী দিবসে (৮ মার্চ) নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের প্রদায়ক জুনাইদ আল হাবিব।

আইন পেশাকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
- এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। 

পড়াশোনা ও আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার গল্প।
-ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করি। এরপর লিংকন ইন থেকে বার অ্যাট ল সম্পন্ন করি। তারপর ২০০৬ সালে আইন পেশায় যুক্ত হই। ছোটবেলা থেকেই আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে পথ খুব সহজ ছিল না। সামনে অনেক পথ বাকি। 

ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। একটি করপোরেট চেম্বারে কাজ করেছি। কিছুদিন ব্র্যাক ব্যাংকের লিগ্যাল হেড ছিলাম। কিন্তু ধরাবাঁধা কাজ ভালো লাগত না। আমি খুব স্বাধীনচেতা মানুষ। তাই নিজের ল চেম্বার প্রতিষ্ঠা করি। এরপর আমার জীবনসঙ্গী ব্যারিস্টার ওমর খান এবং আমি একসঙ্গে ল প্র্যাকটিস শুরু করি। লিগ্যাল কাউন্সেল এখন দেশি-বিদেশি পাঁচশ প্রতিষ্ঠানকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে। 

পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। সময় সমন্বয় করেন কীভাবে?
-আমি আইনি সমস্যায় আজীবন সেবা দিতে চাই। যত বেশি সম্ভব তত বেশি চাই। ফলে একটু বেশি কাজ করি। আইন পেশার বাইরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখছি। টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি। রাজনৈতিক, সামাজিক, আইনগত বিষয়ে প্রতিদিনই বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছি। মানুষ যেন উপকৃত হয়। পেশার বাইরে এই যে সময় ও শ্রমটা দেই, আমি কিন্তু ক্লান্তি বোধ করি না। বরং উপভোগ করি। কারণ, এগুলো আমি ভালোবেসে করি। মানুষের সেবার জন্য করি।

একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে যেতে চাই। কে কে আছেন পরিবারে?
-আমাদের দুই ছেলে, এক মেয়ে। আমার স্বামী ব্যারিস্টার ওমর খান জয় সফল করপোরেট আইনজীবী। তিনি লিগ্যাল কাউন্সেলের হেড অব চেম্বার্স। করপোরেট ল নিয়ে আমরা একসঙ্গে প্র্যাকটিস করছি। আমার একমাত্র ভাই একজন সফল ব্যবসায়ী ও ইঞ্জিনিয়ার। আমার বাবা-মা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।

ছোটবেলায় পরিবার থেকে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন উসকে দিয়েছিল কেউ? 
-বাবা অনুপ্রেরণা দিয়েছেন সব সময়। সাপোর্ট ছিল সবারই। মা আমার যেকোনো সাফল্যে ভীষণ খুশি হন। তাকে আনন্দিত করার বাসনা আমাকে উজ্জীবিত করে এখনও। 

আপনি মূলত কী কী বিষয় নিয়ে ল প্র্যাকটিস করছেন?
-পারিবারিক বিষয়, তালাক, জমিজমা, কোম্পানি, সন্তান-অভিভাবকত্ব, বিবাহবিচ্ছেদ আইন নিয়ে বেশি সেবা দিচ্ছি। 

ন্যায়বিচার, আইনগত অধিকার, আইনি সহায়তা সম্পর্কে সমাজের প্রান্তিক মানুষের ধারণা কেমন? 
-গ্রামের মানুষ এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ এসব বিষয়ে অতটা সচেতন নন। অনেক কিছু তারা জানেন না। যার কারণে বিপাকে পড়েন আইনি সহায়তা নিতে এসে। আইন সম্পর্কে ধারণার অভাবে তারা নানাভাবে বঞ্চিত হন। অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টিরও কারণ হন। 

সমাজে নারীদের একটা অংশ এখনও পিছিয়ে আছে।
-বর্তমানে নারীরা বিস্ময়করভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিমান চালাচ্ছেন, আদালতে যাচ্ছেন, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতাসহ সবখানে তাদের জয়জয়কার। তবে এর বিপরীতে এখনও একটা অংশ পিছিয়ে আছে। যারা পিছিয়ে আছে তাদের এগিয়ে নিতে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা নারীকে যোগ্য করবে। যোগ্য হলে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। তাদের যোগ্য করতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের অগ্রগামী মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, নারী যতক্ষণ যোগ্য না হবে ততক্ষণ না পরিবার, না রাষ্ট্র যথার্থ মর্যাদা পাবে। 

যারা আইন পেশায় আসতে চান তাদের কিছু বলেন।
-নিষ্ঠা, সততা, একাগ্রতা থাকলে যেকোনো চাওয়াই পূরণ হবে। তবে আইনজীবী হওয়ার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। সাফল্য নয়, সার্থকতায় বিশ্বাসী হতে হবে। মানুষের সেবার নিয়তে না এলে এ পেশা দিন শেষে আপনাকে কিছুই দেবে না। 

সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
-আপনাকে, ঢাকা পোস্ট এবং পাঠককেও ধন্যবাদ।

এইচকে/এমএমজে