প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় চার বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তারকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।

রোববার (২২ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি বিচারপতি হাবিবুল গণির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তারকে জামিন দেন। পরে এই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিন জনের সর্বোচ্চ ১০ বছর করে এবং বাকি ৪৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন সাতক্ষীরার আদালত।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফুর রহমান ও রিপনকে ১০ বছর করে, আব্দুল কাদের বাচ্চুকে ৯ বছর, আব্দুর রাজ্জাককে ছয় বছর, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, আব্দুর রাকিব মোল্লা, আক্তারুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, হাসান আলী, ইয়াছিন আলী, ময়না, আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রব, রিংকু ও আব্দুস সামাদকে চার বছর ছয় মাস করে এবং আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, আব্দুল খালেদ মঞ্জুর রোমেল, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মাজহারুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, জহুরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, মো. আলাউদ্দিন, আলতাফ হোসেন, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, শাহাবুদ্দিন, সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, টাইগার খোকন, জাবিদ রায়হান লাকী, রকিব, ট্রলি শহীদুল, কনক, শেখ কামরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, বিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফ্ফার গাজী ও মাহাফুজুর রহমান সাবুকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০২ সালে কলারোয়ার এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখে মাগুরায় যাচ্ছিলেন। কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে তার গাড়িবহর পৌঁছালে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা গুলিবর্ষণ করে এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় বিরোধী দলীয় নেতা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার গাড়িবহরে থাকা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, শেখ হাসিনার ক্যামেরাম্যান শহীদুল হক জীবনসহ অনেকেই আহত হন। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও এ ঘটনায় আহত হন। 

কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মোসলেম উদ্দিন এ ঘটনায় কলারোয়া থানায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। থানা মামলাটি রেকর্ড না করায় একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তিনি সাতক্ষীরার আমলি আদালতে মামলাটি করেন। এ মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এসময় তদন্ত করে পুলিশ তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়।

মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে মামলা বাতিলের আবেদন করেন আসামিরা। এরপর ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার জন্য সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রিট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর মামলাটির বিচার কাজ নতুন করে শুরু হয়। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৫০ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।

এমএইচডি/জেডএস