সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল (বুধবার) আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন বিএনপির প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ঘটনার বিচার দাবি করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল সোয়া ৯টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বেঞ্চে আসন গ্রহণ করেন আপিল বিভাগের ৮ বিচারপতি। এসময় গতকাল ঘটে যাওয়া পুলিশের হামলা ও মামলার কথা তুলে ধরেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। পাশাপাশি আইনজীবীদের নিরাপত্তা চান তিনি।

এরপর প্রধান বিচারপতিকে সম্বোধন করে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আমরা আপনার আদালতের আইনজীবী। আপনি আমাদের অভিভাবক। আমরা কী এমন অপরাধ করেছি? গতকাল পুলিশ আইনজীবীদের নির্যাতন করল। এ থেকে নারী আইনজীবীরাও রেহাই পাননি। আমি পুলিশকে বলেছি, আমি সম্পাদক প্রার্থী। তারপরও আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। বার ভবনে আমাদের কক্ষগুলো ‘লক’ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা আপনার কাছে এসেছি।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমি নিজেও পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আজও আমি ভালো করে হাঁটতে পারছি না। গতকাল মিলনায়তনের ভেতরে আইনজীবীদের পায়ের নিচে ফেলে নির্যাতন করেছে পুলিশ। সাংবাদিক ও নারী আইনজীবীদেরও লাঠিচার্জ করা হয়েছে।

এসময় বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা কোর্ট অফিসার। আমরা আপনাদের সম্মান করি। এখন আদালতে মামলা শুনব। আপনারা দুজন (ব্যারিস্টার খোকন ও কাজল) বেলা ১১টার সময় খাস কামরায় আসুন। আপনাদের কথা শোনা হবে। প্রয়োজনে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও ডেকে আনব।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে আজও (বৃহস্পতিবার) বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) পাঁচ শতাধিক পুলিশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মোতায়েন থাকবে। 

অন্যদিকে আইনজীবীদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সকাল ১০টা থেকে দ্বিতীয় দিনের ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এই নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত রয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা।

যা হয়েছিল গতকাল

নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে গতকাল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের কারণে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। 

সকাল পৌনে ১০টা থেকে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিলনায়তনের ভেতর থেকে বের করে দেয় পুলিশ। এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন।

পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসার পর দুপুর ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পরে একাধিকবার বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সংগঠিত হয়ে ভোটকেন্দ্রের দিকে বিক্ষোভ নিয়ে এগিয়ে আসেন। পুলিশ ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে বারবার তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে বিকেল ৩টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। এরপর সাড়ে ৩টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গণে থাকা ভোটের প্যান্ডেলের দিকে যান। এক পর্যায়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর পরপরই পাল্টা মিছিল করেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সমিতি ভবনের মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাদের আবারও ধাওয়া করে পুলিশ।

এমএইচডি/কেএ