সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে পুলিশি হামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ১৫ মার্চ আবেদনকারীদের, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পেটানোর ঘটনা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না সেই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।   

রোববার (১৯ মার্চ) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বিএনপির প্যানেলের প্রার্থীরা এ রিট দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, পুলিশের আইজি, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ডিবি প্রধান ও শাহবাগ থানার ওসিকে বিবাদী করা হয়েছে।

আগামীকাল (সোমবার) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি  শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেল ৫টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের দুই দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ শেষ হয়। প্রথম দিনের মতো  দ্বিতীয় দিনেও বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল ও হট্টগোলের জেরে উত্তপ্ত ছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ।

নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দান থেকে বিরত থেকেছেন। তারা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের দাবি জানান।

নির্বাচন উপ-কমিটির অন্যতম সদস্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ৮ হাজার ৬২০ ভোটারের মধ্যে ৪ হাজার ১৩৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।  নির্বাচনের প্রথম দিন ২ হাজার ২১৭ জন আইনজীবী শেষ দিন ১ হাজার ৯২০ জন ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

১৬ মার্চ দিবাগত রাতে ১৪টি পদের সব কটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। 

ভোটের শেষ দিন যেমন ছিল

নির্বাচনের দ্বিতীয় দিন (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের আশপাশে ৫ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল ৯টার পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আপিল বিভাগে গিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে বিচার প্রার্থনা করেন।

তারপর সকাল ১০টা ১০ মিনিট থেকে কঠোর পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার ‍রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতির দপ্তরে যান। এ সময় সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বসে সুপ্রিম কোর্ট বারে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের প্রবেশমুখে মুখোমুখি অবস্থান নেন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। এ সময় পাল্টাপাল্টি মিছিল-স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয় এবং ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে হট্টগোল ও হইচই চলে। এ সময় চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নীরব ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নেন বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও স্লোগান। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবশেষে বিকেল ৫টায় শেষ হয় ভোটগ্রহণ।

যা হয়েছিল প্রথম দিন

গত বুধবার দিনভর হট্টগোল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ, ভাংচুর, পাল্টাপাল্টি মিছিল আর শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোটগ্রহণ হয়।

নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা ভোট প্রদান করলেও ভোট প্রদান থেকে বিরত থেকেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ভোটে দুই হাজার ২১৭ আইনজীবী ভোট দিয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের কারণে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

সকাল পৌনে ১০টা থেকে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

এমএইচডি/কেএ/ওএফ