রাজধানীর বনানীর কামাল আতার্তুক সড়কের এফআর (ফারুক-রূপায়ন) টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের চার বছর আজ। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ওই অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।

এ ঘটনায় ভবনের দুই মালিক এস এম এইচ ফারুক ও তাসভির উল ইসলাম এবং রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলকে এজাহারভুক্ত আসামি করে বনানী থানায় মামলা করে পুলিশ। বনানী পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

তিন বছরের বেশি সময় নিয়ে তদন্ত শেষে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর আদালতে এ চার্জশিট দেন। সেখানে এস এম এইচ ফারুক, তাসভির উল ইসলাম, সেলিম উল্লাহ, এ এ মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আমিনুর রহমান, ওয়ারদা ইকবাল, কাজী মাহমুদুন নবী ও রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়।

তবে, চার্জশিটে এজাহারনামীয় গুরুত্বপূর্ণ আসামি ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খানকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। পরে মামলাটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত না হওয়ায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। যার দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। ফলে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হলেও মামলাটি তদন্ত পর্যায়েই এখনো ঝুলে আছে।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

আদালতের বনানী থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে  বলেন, এ মামলায় আট জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। তবে আদালত চার্জশিট গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ মে দিন ধার্য রয়েছে।

মর্মান্তিক এ অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনের নকশা জালিয়াতি ও ভুল নকশা অনুমোদনের ঘটনায় রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদিম, টাওয়ারের মালিক এস এম এইচ ফারুক, রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মুকুলসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের মামলাগুলো বিচার শুরু হলেও তা সাক্ষ্যগ্রহণে আটকে আছে।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ নিহত হওয়ার পর এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ওই ভবনের জমির মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এস এম এইচ ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফআর টাওয়ার। এফআর টাওয়ারটি ২৩তলা হলেও রাজউকের নকশায় ১৮তলা পর্যন্ত অনুমোদন। ১৯তলা থেকে ২৩তলা পর্যন্ত পাঁচটি ফ্লোর তাসভীর উল ইসলাম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নির্মাণ করিয়ে নিজে মালিক হন। জাল নকশা দিয়ে ভবনের পাঁচটি ফ্লোর অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণে ঝুলে আছে দুদকের দুই মামলা

বনানীর এফআর টাওয়ার (ফারুক-রূপায়ন টাওয়ার) নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ২৫ জুন কমিশনের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুটি পৃথক মামলা করেন। এর মধ্যে নকশা জালিয়াতির অভিযোগে ভবন মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ চার আসামির বিচার চলছে। অপর আসামিরা হলেন— রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন খাদেম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ইজারা গ্রহীতা সৈয়দ মো. হোসাইন ইমাম ফারুক (এস এম এইচ আই ফারুক) ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান প্রকশলি সাইদুর রহমান।

২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ কামাল হোসেনের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলায়  ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র পাঁচ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৭ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

আরেক মামলায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর রূপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র সাত জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৬ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে।

/এনআর/এসএসএইচ/