বিমানে পাইলট নিয়োগে অনিয়ম : কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের
পাইলট নিয়োগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক ও নিজস্ব নিয়মনীতির লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রোববার (১৩ আগস্ট) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদ।
এর আগে পাইলট নিয়োগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আন্তর্জাতিক ও নিজস্ব নিয়মনীতির লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গত ৩০ মার্চ পাইলট নিয়োগে বিমানের আন্তর্জাতিক ও নিজস্ব নিয়মনীতির লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিটি গঠন করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নোটিশ পাঠানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) পাইলট নিয়োগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক ও নিজস্ব নিয়মনীতির চরম লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে। পাইলট হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে বিমানের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যকে। বিমানের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এই নিয়োগের তদন্ত চায় পাইলটদের সংগঠন বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।
বিষয়টি তদন্তের দাবি করে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. যাহিদ হাসানের বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে বাপার নির্বাহী কমিটি। একইভাবে এর প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে বিমানের প্রশাসন ও ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের পরিচালকদের কাছে।
পাইলট নিয়োগে যেসব অনিয়ম তুলে ধরেছে বাপা
এতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন পত্রিকায় বিমানের পাইলট নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। বাপার পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, নিয়ম ভেঙে পাইলট নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিয়োগের প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিমানের ট্রেনিং বিভাগের প্রধানকে। যার নিজের স্ত্রী পাইলট হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এটি নিয়মের চরম লঙ্ঘন।
পাইলট নিয়োগের নিয়মে বাপার পর্যবেক্ষণ
বাপা বলেছে, পাইলট নিয়োগে বিমান ও বাপার মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে। তবে নিয়োগের সময় এই চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিয়োগের সময় বাপার মতামতকে পাত্তা দেওয়া হয়নি। বিমানের বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ চালনার জন্য নতুন করে কোনো পাইলট নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে বিমানের পক্ষ থেকে এই উড়োজাহাজের জন্য ক্রু নিয়োগের সার্কুলার দেওয়া হয়। ক্রুদের বাছাই করে ট্রেনিং দেওয়ার মেইল পাঠানো হয়েছে।
একজন ব্যক্তি ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে বিমানের ফার্স্ট অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি সিম্যুলেটর ট্রেইনিং করেননি। পরে বিমানের খরচে তাকে ট্রেনিং করতে পাঠানো হয়েছে যা সম্পূর্ণ অপচয়।
বিমানের চরম গাফলতির কারণে বোয়িং-৭৮৭ ফ্লাইটের ক্রুদের বিদেশে গিয়ে জেডএফটিটি এবং পিপিসি নামের দুটি ট্রেনিং রিটেক করতে হচ্ছে, যা বিমানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়ের অন্যতম কারণ। বোয়িং-৭৭৭ এর জুনিয়র পাইলটকে পাইলটদের প্রশিক্ষক বানানো হয়েছে যা আনইথিক্যাল। এটি সিনিয়র পাইলটদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
অনিয়মের কারণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছ থেকে বিমান বাংলাদেশ সতর্কতা চিঠি (ওয়ার্নিং লেটার) পেয়েছে। এটি একটি এয়ারলাইন্সের জন্য বিব্রতকর বিষয়।
বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মেয়েকে পাইলট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ট্রেনিংয়ের সময় ওই নারী পাইলটের সাধারণ জ্ঞান কম থাকায় তাকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে ওই পাইলটের পক্ষে বোয়িং-৭৭৭ এর ট্রেনিং নেওয়াও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
বাপা জানায়, বাপা চায় বিমানে দক্ষ পাইলট নিয়োগ দেওয়া হোক। পাইলট নিয়োগে সব নিয়মনীতি মানা হোক, যা বিমানকে উচ্চমানের একটি এয়ারলাইন্সে পরিণত হতে সাহায্য করবে। এজন্য বাপা গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত করার দাবি করছে।
এমএইচডি/জেডএস