রমনার বটমূল /ফাইল ছবি

২০০১ সালে রাজধানীর রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় ঘটে। এ ঘটনায় একই সময়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। হত্যা মামলাটি সাত বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালের রায় ঘোষণা করা হলেও বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি দেড় যুগেরও বেশি সময়ে (২০ বছরে) নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ আশা করছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খুব শিগগিরই মামলাটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভুইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু করোনা কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শেষে আসামি পক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তি উপস্থাপন শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হবে। তবে আশা করছি খুব শিগগিরই রায় ঘোষণা করা সম্ভব হবে।’

মামলাটির ২০ বছরেও সাক্ষ্যগ্রহণ কেন সম্পন্ন হয়নি জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বড় জঙ্গি ঘটনায় একাধিক মামলা ছিল। ওই মামলাগুলোর বিচারকাজ সম্পন্ন করতে সময় নেওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্টোক জনিত কারণে অসুস্থ থাকায় দুই বছর সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর এগুলো অন্যতম কারণ।

একই কথা বলেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। করোনা উপরিস্থিতর কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেই মামলাটির বিচার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।’

মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

২০০১ সালে পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। এরপর ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। 

২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন- মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মাওলানা তাজউদ্দিন (পলাতক) ও আরিফ হাসান সুমন। আসামিদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়াও তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল। ৩০২/৩৪ ধারায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটিতে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

বিস্ফোরক মামলার অভিযুক্তরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা শাহাদাৎ উল্লাহ জুয়েল।

অভিযুক্ত মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল রাতে কার্যকর হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাই মামলা হতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

টিএইচ/এসএম