সব হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন এক ব্যারিস্টার
পদ্মায় স্পিডবোট ডুবিতে বাবা-মা ও দুই বোনকে হারিয়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশু মিমের দায়িত্ব নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া।
বুধবার (৫ মে) সকালে তিনি নিজেই মিমের যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ব্যারিস্টার আহসান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'মিম এর থাকা-খাওয়া, জামা-কাপড়, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন এবং সুন্দর মানসিক ও পুষ্টিকর শারীরিক বিকশের জন্য যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়ার প্রাথমিক সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে সে তার নানা-নানির সঙ্গে আছে। যেহেতু তারাই এখন তার গার্ডিয়ান, তাই এখনি তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। তবে তার নানা-নানির বয়স, আর্থিক সচ্ছলতা এবং তার সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া করছি। তেরখাদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) আবিদা সুলতানার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি শিগগিরই ওই এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। অত্র এলাকার এমপি মহোদয়ের সঙ্গে আজকে এ বিষয়ে কথা হবে। শিবচর এলাকার এমপি লিটন চৌধুরী জানিয়েছেন, আমি যদি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেই তাহলে তিনিও মিমকে দ্রুত ঢাকায় আনার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।'
ব্যারিস্টার আহসান তার ফেসবুক পোস্টে আবেগতাড়িত হয়ে লিখেছেন, ‘মুহূর্তের দুর্ঘটনায় আট বছর বয়সী মেয়েটির জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে! তবে আল্লাহ্ সহায় থাকলে, তার একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারবো ইনশাল্লাহ। আমার ইচ্ছে তাকে একটি ভালো স্কুলে পড়ানো এবং ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো। অনেকেই তাকে দত্তক নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে যোগাযোগ করছেন। যদি আমার থেকে ভালো অপশন পাওয়া যায় তাহলে আইনগত প্রক্রিয়ায় সেই ব্যবস্থাও করবো তার নানা-নানির অনুমতি সাপেক্ষে, অন্যথায় সব দায়িত্ব আমাদের ‘পরিবর্তন করি’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে আমিই পালন করবো ইনশাল্লাহ।'
বিজ্ঞাপন
'দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মিমকে সাহায্য করা, তার বাবা-মার লাশ দাফনে সহযোগিতা করা এবং আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য শিবচর উপজেলার ইএনও আসাদুজ্জামান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দীর্ঘমেয়াদী একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। সবাই দোয়া করবেন মিমের জন্য।’
ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভুঁইয়া গত বছর দেশে করোনা মহামারির শুরু থেকেই থেকেই গরিব-অসহায় মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি লকডাউনের মধ্যে কান্নারত অবস্থায় ভাইরাল হওয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী এক রিকশাচালককে ১ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করে প্রশংসা কুড়ান।
গত ৩ মে পদ্মায় স্পিডবোট ডুবিতে বাবা-মা ও দুই বোনকে হারিয়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় শিশু মিম। দুর্ঘটনার পর নদীতে একটি ব্যাগ ধরে ভাসছিল মিম। এ সময় নৌ-পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিশু মিমের বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, ছোট দুই বোন সুমি (৫) ও রুমি (৩) স্পিডবোট দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মিমকে উদ্ধারকারী নৌ- পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী বলেন, ‘শিশুটিকে নদীতে ব্যাগ ধরে ভাসতে দেখি। হাত ও চোখের কাছে আঘাতের চিহ্ন ছিল সামান্য।
দ্রুত তাকে পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিশুটির পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছে।’ শিশু মিম শুধু জানে তার মা, বাবা, বোনেরা কেউ বেঁচে নেই। মাঝে মাঝেই মা মা বলে কেঁদে উঠছে সে। কান্নারত অবস্থায় মিম বলে, আমরা দাদু বাড়ি যাচ্ছিলাম। দাদা মারা গেছে। তাকে দেখতে। আমার আর কেউ নাই।
গত ৩ মে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে এসে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ পর্যন্ত ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ৫ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
এমএইচডি/এসএম