সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদ নিয়ে মঙ্গলবার বিএনপি ও আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল-স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন।

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টার দিকে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে আসেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাকে স্বাগত জানাতে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। প্রায় এক ঘণ্টা সভাপতির কক্ষে অবস্থানের পর এ এম আমিন উদ্দিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে চলে যান। তারপরও সভাপতির কক্ষে ও কক্ষের সামনে অবস্থান করতে থাকেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। একই স্থানে ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও। 

এক পর্যয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘স্বঘোষিত সভাপতি মানি না’ বলে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরাও পাল্টা স্লোগান দিতে শুরু করেন। টানা প্রায় এক ঘণ্টা পাল্টাপাল্টি স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন। এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সভাপতির কক্ষের সামনের স্থান ছেড়ে মিছিল নিয়ে বার সমিতি ভবন প্রদক্ষিণ করেন।

এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সভাপতির পদ নিয়ে নোংরামি হচ্ছে। এ ধরনের রাজনীতি আমি চরমভাবে ঘৃণা করি। আমি এর আগেও সভাপতি থেকেই বারের সব উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক মাস পর সভাপতির কক্ষে গিয়েছিলাম। তবে সভাপতির চেয়ারে বসিনি। যদিও সভাপতির কক্ষের সামনে তার নামফলক লাগানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের নাম ঘোষণা করে কার্যনির্বাহী কমিটির আওয়ামীপন্থি অংশ। তারা দাবি করেছেন সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় এ এম আমিন উদ্দিন কণ্ঠ ভোটে সভাপতি হয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট বারের প্যাডে এক বিজ্ঞপ্তিতে সমিতির সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা বলেন, তার সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সমিতির সভাপতি পদে এ এম আমিন উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করলে উপস্থিত সদস্যরা করতালি ও কণ্ঠভোটে তার প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। এ এম আমিন উদ্দিনকে ২০২১-২২ মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের জন্য সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় সেখান থেকে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ এম আমিন উদ্দিন সভাপতি পদে ২০২১-২০২২ মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।

এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আওয়ামীপন্থি প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমিতির সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যাসহ ৭ জন কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য একমত পোষণ করে স্বাক্ষর করেন। অবশ্য বিএনপিপন্থি প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ কার্যনির্বাহী পরিষদের ছয় সদস্য এতে স্বাক্ষর করেননি।

সমিতির প্যাডে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪ মে আহুত বিশেষ সাধারণ সভা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে সভাপতির পদটি শূন্য হয়।

৪ মে’র সভায় কী হয়েছিল?

আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে সভাপতি নির্বাচনে করণীয় ঠিক করতে গত ৪ মে বিশেষ সাধারণ সভার আহ্বান করা হয়। সভার শুরুতে সাধারণ সভার সভাপতিত্ব নিয়ে আওয়ামী এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ অবস্থায় সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন, বারের সংবিধান অনুযায়ী আমি এ সভা পরিচালনা করব। তখন এক পক্ষ বিরোধিতা শুরু করলে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের সহসভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা ডায়াসে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন। 

তখন কাজল বলেন, উনার সভাপতিত্ব করার কোনো কার্যবিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহসভাপতি আছেন। তখন শফিক উল্ল্যা বলেন, আমি আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তখন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা তাকে সমর্থন দেন। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করতে থাকেন। তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন কণ্ঠ ভোট নয়, নির্বাচন চাই। এক পর্যায়ে মিলনায়তনের বৈদ্যুতিক সংযোগ ও মাইকের সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। মঞ্চের ওপর ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে।

তখন সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সাধারণ সভা করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি না থাকায় সভা মুলতবি করা হলো। তুমুল হট্টগোলের মধ্যে দিয়ে বিশেষ সাধারণ সভাটি শেষ হয়।

এমএইচডি/এনএফ/জেএস