চট্টগ্রামের অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আবেদন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ আবেদন করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, আলিফ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছেন তার বাবা জামাল উদ্দিন। জেলা প্রশাসক নির্বাচন কমিশনের কাজে ঢাকায় থাকায়, তার পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরীফ উদ্দিন আবেদন গ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান।

আবেদনে জামাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোট ৩৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে ১৭ জন বর্তমানে পলাতক রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করা হয়েছে এবং জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।

আবেদনে বলা হয়, মামলাটি জাতীয়ভাবে আলোচিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলা, যার সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের মৌলিক প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করার স্বার্থে মামলাটির দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া প্রয়োজন। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ অনুযায়ী জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য।

এদিকে, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরের আদেশ দেন। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারকের নির্দেশনায় কোনো বিচারিক আদালতে হত্যা মামলাটির পরবর্তী প্রক্রিয়া চলবে।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, আইনজীবী আলিফের বাবা ও মামলার বাদী জামাল উদ্দিনের উপস্থিতিতে আজ শুনানি হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১ জুন চার্জশিট দাখিল করেন এবং ১৫ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত এটি গ্রহণ করেন।

তিনি আরও বলেন, চার্জশিটভুক্ত মোট ৩৯ জন আসামির মধ্যে ১৭ জন বর্তমানে পলাতক। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ক্রোকি ও হুলিয়া জারি করা হয়েছে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। নিম্ন আদালতের সব আইনানুগ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় মামলাটি বর্তমানে বিচার উপযোগী অবস্থায় রয়েছে।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয় তাকে। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে চিন্ময় কৃষ্ণকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসকন অনুসারীরা। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। ওইদিন দুপুরের পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালান।

একপর্যায়ে ওইদিন বিকেলে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ। এ ঘটনায় গত বছরের ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় ভুক্তভোগী আইনজীবী সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে এজাহারে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি একই ঘটনায় পুলিশসহ ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে আরও চারটি মামলা করেন কোতোয়ালি থানায়।

আরএমএন/এসএসএইচ