হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের এক হতদরিদ্র রিকশাচালকের ভাঙ্গা টিনের ঘর মেরামত করার ঘোষণা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি তার পশু কোরবানির টাকার একাংশ বাঁচিয়ে এই মেরামতের কাজ করবেন বলে জানান।

সোমবার (১৯ জুলাই) চুনারুঘাটে রিকশাচালকের ভাঙ্গা টিনের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যারিস্টার সুমন এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, আমি দুটো গরু কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এর মধ্যে একটি গরু কিনেও ফেলেছি। আমি যে ঘরটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, এটা একটা রিকশাচালকের ঘর। এটা চুনারুঘাট পৌরসভার ভেতরে চার নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। এ ঘরটা দেখার পর আমার নিজের অনেকগুলো কাজ থমকে গেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার হয়তো কিছু পয়সা আছে বলে দুটো পশু কোরবানি করার চিন্তা করছি। কিন্তু এই মানুষটার ঘরের চাল দেখে আমার মনে হয়েছে কবিতায় আসমানিদের ঘরের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, এ ঘরটার অবস্থা তার থেকেও করুণ। রিকশাচালক ইউসুফের এই ঘরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ে। তার চার সন্তানের মধ্যে তিনজন মেয়ে এবং একজন ছেলে, রয়েছে স্ত্রী। পাশে ছোট টিনের ঘরে তার বাবাও থাকেন। আমরা কেউ কেউ অনেক দামি দামি পশু কোরবানি দিচ্ছি। কোরবানির জন্য হয়তো ছোট একটা গরু দিলেও হয়, সেখানে অনেক দামি দামি গরু কিনছি। কিন্তু এই মানুষটার কোরবানি তো দূরের কথা, থাকার মতো কোনো ঘরই নেই। এক বছর ধরে এ ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করছেন।

ব্যারিস্টার সুমন রিকশাচালকের ভাঙ্গা টিনের ঘরের ভেতরের অংশ দেখিয়ে বলেন, বৃষ্টি হলে এই ঘরে থাকার কোনো উপায় নেই। তার তিনটা মেয়ের মধ্যে একটা মেয়ে পড়াশোনা করে। টাকার অভাবে দুই মেয়ে পড়াশোনা করতে পারে না। আসলে পড়াশোনার কথা বলা সহজ। আমরা যারা রাজনীতি করি তারা মুখে বলি, সবাইকে পড়ালেখা করান। কিন্তু আপনার কি মনে হয়, এই ভাঙ্গা টিনের ঘরের মধ্যে কী কাউকে পড়াশোনা করানো সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে তার সন্তানদের পড়াশোনার কথা কীভাবে বলব? ঘরে থাকাই তো দায়। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার দুইটা পশু কোরবানি দেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে একটা কোরবানি দেব। আরেকটা কোরবানির টাকা দিয়ে আপাতত টিন কিনে ঘরটা মেরামত করে দেব। দু'একদিনের মধ্যে তার ঘরে নতুন টিন লাগিয়ে দেব। তাহলে হয়তো তারা বৃষ্টি থেকে বেঁচে যাবে। 

আপনাদের আমি আহ্বান জানাই, বেশি দামি দামি কোরবানি না করে আপনার বাড়ির আশেপাশের গরিব মানুষকে সহযোগিতা করুন। 

এমএইচডি/জেডএস