আনুশকা নূর আমিন ওরফে শাহনূরীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান যৌনবর্ধক ওষুধ ও মাদক সেবন করেছে কি-না, তা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা এ আদেশ দেন।

আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান ধর্ষণের সময় যৌনবর্ধক ওষুধ ও মাদক সেবন করেছেন কি-না, তা পরীক্ষা করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন।’

আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান ধর্ষণের সময় মাদক সেবন করেছে কি-না, তা জানার জন্য তার ডোপটেস্ট করা প্রয়োজন। এছাড়া তিনি ধর্ষণের সময় কোনো যৌনবর্ধক ওষুধ সেবন করেছেন কি-না এবং সেবন করলে কোন ধরনের ওষুধ সেবন করেছেন তা দিহানের রক্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রয়োজন বলে তদন্ত কর্মকর্তা মনে করেন।

ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় গত শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ইফতেখার ফারদিন দিহান ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গত ৭ জানুয়ারি রাতে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আনুশকার বাবা মো. আল-আমিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-৬।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টায় আনুশকা কোচিংয়ের পেপার আনতে বাইরে যাচ্ছে বলে ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আনুশকা বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

এজাহারে বলা হয়, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আনুশকার মাকে ফোন দেন। তিনি ফোনে জানান, আনুশকা তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এ কথা শুনে আনুশকার মা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

আনুশকার বাবা এজাহারে আরও বলেন, তারা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছেন, দিহান তার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশে বেলা ১২টার দিকে বাসায় ডেকে নিয়ে যান। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় তার মেয়েকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে আনুশকা অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান আনুশকাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে আনুশকার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেসনিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে আনুশকার মৃত্যু হয়েছে। তার যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ দুই দিক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ময়নাতদন্তে দেহের দুই অংশেই আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ধস্তাধস্তির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা জানার জন্য নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। ঘটনাস্থলে একাধিক ব্যক্তি ছিল। তাদের ডিএনএ নমুনা এবং ভিসেরাও সংগ্রহ করা হয়েছে।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় শুক্রবার রাতে দিহানের তিন বন্ধুকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ন্যায়বিচার চেয়েছেন আনুশকার মা
রাজধানীর কলাবাগানে ও-লেবেল পড়ুয়া ছাত্রী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়েছেন তার মা শাহনূরী আমিন। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তার মেয়ের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তারা যেভাবে মামলা করতে চেয়েছিলেন পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি। 

সরকারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবিও তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হচ্ছে- ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার করা, মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে করা, দিহান ও তার সঙ্গীদের বিচারের আওতায় আনা, ডিএনএ পরীক্ষা করা এবং আমার পরিবার যেন কোনো অসুবিধার শিকার না হয় তার ব্যবস্থা করা।
 

টিএইচ/জেডএস