গত ০৮ জানুয়ারি দিহানকে আদালতে নেওয়া হয়। ফাইল ছবি।

রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ’ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহান ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন দিহানের বাসার দারোয়ান দুলাল মিয়া। ঘটনায় আর কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

গত ৭ জানুয়ারি ঘটনার দিন রাতেই আনুশকার বাবা মো. আল আমিন বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় মামলা করেন। মেয়ে হত্যায় ন্যায় বিচার দাবি করেছেন আনুশকার বাবা-মা। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন হতে পারে। এছাড়া অর্থদণ্ড দিতে পারেন আদালত। মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে।

প্রশান্ত কুমার কর্মকার, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট

আইন কী বলছে?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ নম্বর ধারায় (ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু ইত্যাদির শাস্তি) বলা আছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ বিয়ে ছাড়া ১৬ বছরের বেশি বয়সী কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করে অথবা ১৬ বছরের কম বয়সী কোনো নারীর সঙ্গে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়াই যৌনসঙ্গম করেন তবে তিনি ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবে।

৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তির ধর্ষণ বা ধর্ষণ পরবর্তী কর্মকাণ্ডের কারণে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হয় তবে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এর অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন হতে পারে। এছাড়া অর্থদণ্ড দিতে হতে পারেন আদালত।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা এ মামলায় ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে বলে জানান ওই আইনজীবী।

তিনি বলেন, ওই সময়ের মধ্যে যদি বিচারিক আদালত মামলা নিষ্পত্তি করতে না পারেন তবে সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে হবে। পাশাপাশি বিচারকাজ পরিচালনার জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন। আদালত সময় বাড়ানো উচিৎ মনে করলে আরও ৩০ দিন সময় দেবেন।

তারপরও মামলা নিষ্পত্তি না হলে এবং কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন সুপ্রিম কোর্ট। 

মামলার এজাহার যা বলা হয়েছে

মামলার এজহারে আনুশকার বাবা মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টার মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টায় আনুশকা কোচিংয়ের পেপার আনতে বাইরে যাচ্ছে বলে ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আনুশকা বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

মো. আল আমিন এজাহারে বলেন, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আনুশকার মাকে ফোন দেয়। সে জানায়, আনুশকা তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। পরে আনুশকার মা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তিনি দায়িত্বরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন, আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

আনুশকার বাবা এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, তারা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছেন, দিহান তার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে বেলা ১২টার দিকে বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। ফাঁকা বাসায় তার মেয়েকে ধর্ষণ করে দিহান। ধর্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণে আনুশকা অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান তার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ময়নাতদন্ত কী বলছে?

গত ৮ জানুয়ারি আনুশকার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেসনিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আনুশকার মৃত্যু হয়েছে। তার যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ দুই দিক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ময়নাতদন্তে দেহের দুই অংশেই আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ধস্তাধস্তির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

দিহান কিছু সেবন করেছিল কিনা তদন্তের নির্দেশ

আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দিহান যৌনবর্ধক ওষুধ বা মাদক সেবন করেছে কিনা তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা এ আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা দিহান ধর্ষণের সময় মাদক সেবন করেছেন কিনা তা জানতে ডোপটেস্ট প্রয়োজন। ওই সময় কোনো যৌনবর্ধক ওষুধ সেবন করে থাকলে তা দিহানের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে জানা যাবে।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

টিএইচ/এসআরএস