সাধারণ মানুষকে সুদখোর মহাজন ও চড়া সুদের কবল থেকে রক্ষা করতে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন একদল আইনজীবী। উচ্চ আদালতে এ লড়াইয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশব্যাপী আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তার টিমে রয়েছেন অ্যাডভোকেট লিটন আহমেদ, বিভুতি ভূষণ সরকার, জহিরুল ইসলাম, রাজু হাওলাদার পলাশ, জাকারিয়া হাবিবের মতো একদল তরুণ আইনজীবী। 

আইনি লড়াইয়ের অংশ হিসেবে সারাদেশের অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা বন্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সুমন। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এরইমধ্যে সারাদেশের অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সমবায় সমিতি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে অননুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

উচ্চ আদালতের এই আদেশকে আইনি লড়াইয়ের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে মনে করছেন ব্যারিস্টার সুমন ও সহযোগী আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামের অসহায় মানুষকে সুদখোর মহাজনদের কবল থেকে বাঁচাতে আইনি লড়াই শুরু করেছি। আমাকে সহযোগিতা করছেন একদল তরুণ আইনজীবী। আগামী ২০ নভেম্বর পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত। আমাদের এই আইনি লড়াই অব্যাহত থাকবে। হাইকোর্টের আদেশ সুদখোর মহাজনদের জন্য সতর্কবার্তা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, দেশের প্রত্যেকটি এলাকায়, প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতির নামে সুদের ব্যবসা চলছে। আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ঋণ দেওয়ার নামে উচ্চ হারে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো নিবন্ধন নেই তাদের। সাধারণ মানুষ এসব সুদকারবারিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে আদায় করা সুদের পরিমাণও আকাশছোঁয়া। ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহের সুদ ৫শ থেকে ৬শ টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা, মাসে সুদ হিসেবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা। 

তিনি বলেন, অনেক পরিবার অনিবন্ধিতভাবে গজিয়ে ওঠা এসব সমবায় সমিতি ও সুদকারবারি থেকে ঋণ নিয়ে সুদের বোঝা টানতে টানতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখের সামনে তারা সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উচ্চ হারে সুদ নেওয়ার কারণে গ্রামে-শহরে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এরা যাকে যেভাবে পারে জিম্মি করে সুদ আদায় করে। 

গ্রামের অসহায় মানুষ এসব সুদকারবারিদের কারণে সুইসাইড করছে উল্লেখ করছে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, অনেকে কিডনি বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করছে। মানুষ বসতভিটা হারিয়ে ফেলছে। 

এসব বিষয় যখন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখলাম তখন ভাবলাম দেশের সাধারণ মানুষ এসব সুদকারবারিদের কাছে জিম্মি থাকতে পারে না। এ কারণে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বলেন তিনি।

এদিকে আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া নির্দেশনায় বলেছেন, তদন্তকালীন সময়ে কোনো অননুমোদিত বা লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক সেগুলো বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া চড়া সুদে ঋণদানকারী স্থানীয় মহাজনদের তালিকা দিতে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ৪৫ দিনের মধ্যে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলেছেন।

এমএইচডি/জেডএস