তাজিয়া মিছিলে জঙ্গি হামলা: আরমানের জামিন মেলেনি হাইকোর্টে
প্রায় চার বছর আগে আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর হোসেনি দালানের তাজিয়া মিছিলে জঙ্গি হামলা মামলার আসামি আরমান ওরফে মনিরকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। আদালতের আদেশের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালানের তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় একজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। পরের দিন পুলিশ চকবাজার থানায় মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্যই সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা তাদের পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই হামলা চালায়।
বিজ্ঞাপন
হোসেনি দালানে জঙ্গি হামলার এই মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। পরে মামলাটি গত বছরের ১৪ মে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
এ মামলার ১০ আসামি হলেন- মাসুদ রানা ওরফে সুমন, কবীর হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আসিফ, আবু সাঈদ ওরফে সালমান, আরমান ওরফে মনির, রুবেল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে সজীব, চান মিয়া, ওমর ফারুক, হাফেজ আহসানউল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল ও একজন কিশোর আসামি।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে আসে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তাদের অধিকাংশই শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.) শহীদ হওয়ার দিনকে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করে থাকে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোসেনি দালানের মূল ফটকে একটি তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। মিছিলটি পল্টনে যাওয়ার কথা ছিল। মিছিলে যোগ দিতে এসেছিলেন তরুণ, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। এর মধ্যেই রাত পৌনে দুইটার দিকে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।
স্থানীয়দের মতে, পরপর ১০-১৫টি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কেউবা দৌড় দিতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পায়ের তলায় পড়েছেন। কান্না-চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। আশপাশের বাসিন্দারা যে যেভাবে পারেন মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যান, লেগুনায় করে আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঘটনার পরে হোসেনি দালান এলাকায় অনেককে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল ভাঙা চেয়ার, স্যান্ডেল, তাজিয়া মিছিলের সরঞ্জামাদি। বিভিন্ন স্থানে ছিল ছোপ ছোপ রক্ত। ঘটনাস্থলে কালো স্কচটেপ মোড়ানো একাধিক অবিস্ফোরিত বোমা পড়ে ছিল।
এমএইচডি/ওএফ