আবরার ফাহাদ/ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী পুরিন্দু দেবনাথ পিনকি এ আবেদন করেন।

আবেদনে তিনি বলেন, আদালতে সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক রকিবুল হাসান ৩ ডিসেম্বর তারিখে বেআইনিভাবে আদালত পুনরায় সাক্ষীর জবানবন্দি দেওয়ায় বিজ্ঞ আদালতের নিরপেক্ষতার বিষয়ে আসামিপক্ষের আশংকা হয়। বিজ্ঞ আদালতের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করায় উচ্চ আদালতে মামলাটি বদলি করার জন্য সময়ের আবেদন করা হয়েছে।

আবেদনে আরও বলেন, মামলায় ৩১ নম্বর সাক্ষী ডা. সোহেল মাহমুদ সাক্ষী দেওয়ার সময় দরখাস্তকারীরা লক্ষ্য করেছেন যে ওই সাক্ষীর জবানবন্দি পিডব্লিউর বর্ণনাগুলোর আগেই অর্থাৎ সাক্ষী উন্মুক্ত আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার আগেই কম্পিউটার কম্পোজ করা। এছাড়া বিভিন্ন সাক্ষীর জেরা ও দরখাস্তকারীদের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবীরা তাদের প্রশ্নের উত্তর সাক্ষীর উত্তরের হুবহু রেকর্ড করা হয় নাই।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, এ পর্যন্ত ৪০ জন সাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা আশা করছিলাম, ডিসেম্বরের মধ্যে মামলাটি রায় ঘোষণা সম্ভব হতো। কিন্তু আসামিপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে আদালতের প্রতি অনাস্থার আবেদন করেন। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানান। এ বিষয়ে আগামী ৬ ডিসেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

এর আগে গত ৬ অক্টোবর বাদী আবরারের বাবা বরকত উল্লাহর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যদিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শুরু হয়। 

গত ১৫ সেপ্টেম্বর  আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরআগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলাটি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ পাঠানোর আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রের ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন ৩ জন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং ২১ আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

এজাহারে থাকা আসামিরা হলো— মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।

এজাহার বহির্ভুত ৬ আসামি হলো— ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।

পলাতক তিন আসামি হলো— মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুই জন এজাহারভুক্ত আসামি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত তিনটার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ পরে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।


টিএইচ/এসএম