হাবিবুর রহমান লিটন/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

হাবিবুর রহমান লিটন। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। জন্ম ১৯৭১ সালে ঢাকায়। বাবা পাকিস্তান আমলে ঢাকা হাইকোর্টে চাকরি করতেন। জন্মের ছয় মাস পরে বাবা মারা যান। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে জীবনযুদ্ধে নামেন লিটন। কাজ শুরু করেন প্রখ্যাত আইনজীবী এস আর পালের চেম্বারে। এরপর ১৯৯৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) ‌‘ফরাস’ পদে চাকরি হয় তার। ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে এখন তিনি বার লাইব্রেরির বুক সর্টার পদে কাজ করছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে চাকরি হওয়ার স্মৃতিচারণ করে লিটন বলেন, ‘পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পাস করে ৯০ এর দশকে প্রখ্যাত আইনজীবী এস আর পালের চেম্বারে পাঁচ বছর কাজ করেছি। ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি ফজলুল করিম (পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি) স্যারকে একটা চাকরি দেওয়ার অনুরোধ করি। তিনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন। তখন বিচারপতি ফজলুল করিম স্যার আমার হাত ধরে ওই সময়ের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীর সভাপতি অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমদ স্যারের কাছে নিয়ে যান। তাকে বিচারপতি ফজলুল করিম স্যার বললেন, এই ছেলেটাকে দেখে রাখবেন। তখন খোন্দকার স্যার বললেন, তোমাকে চাকরি দিলে তুমি ঠিকমতো কাজ করতে পারবে তো? তখন আমি বললাম, আপনি আমাকে চাকরি দিচ্ছেন, আমি কাজের দ্বারা আপনার মর্যাদা রক্ষা করব। ’

‘সেদিনই সুপ্রিম কোর্ট বারের কর্মকর্তা নিমেষ দাদাকে খোন্দকার স্যার বললেন, ফরাস পদে (ধোয়া-মোছার কাজ) আমাকে চাকরি দিতে। ওই দিন থেকেই শুরু। তারপর কিছুদিন রিসেপশনে চাকরি করেছি। এভাবে ধীরে ধীরে পদোন্নতি পেয়ে এখন আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরির ‘বুক সর্টার’ হিসেবে কাজ করছি’, যোগ করেন তিনি।

হাবিবুর রহমান লিটন/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরিতে দেশি-বিদেশি ৫০ হাজারের বেশি বই আছে। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের আদালতের জাজমেন্টের বই রয়েছে। যা সবই ইংরেজিতে লেখা। ৫০ হাজারের বইয়ের মধ্যে কোন বই কোন সারিতে রয়েছে তা এক নিমেষেই বলে দিতে পারেন অষ্টম শ্রেণি পাস হাবিবুর রহমান লিটন।

লাইব্রেরিতে নিজের কাজ সম্পর্কে লিটন বলেন, ‘আমি সকাল ৯টায় সুপ্রিম কোর্ট লাইব্রেরিতে আসি। লাইব্রেরিতে ৫০ হাজারের বেশি বই রয়েছে। আইনজীবী স্যাররা বই চান আমার কাছে। আমি তা বের করে দেই। ৫০ হাজার বই কোথায় কোনটা আছে সবই আমার নলেজে। অনায়াসে বলে দিতে পারি কোন বই কোন তাকে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ধরেন, কোন আইনজীবী বললেন, লিটন ডিএলআর এই বইটা দাও। বিএলডি দাও, বিআরডি দাও, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানের আইন সংক্রান্ত যা যা বই আছে তা বের করে দেই। অনেক স্যার বই লেখে তাদেরকেও সহযোগিতা করি। অনেক সময় পার্টির নাম দেখে বড় বড় জাজমেন্ট বের করে দেই। সব স্যারদেরকে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করি। মরহুম সুলতান ভাই আমার সিনিয়র ছিলেন উনার থেকে অনেক কাজ শিখেছি।’

নিজের পরিবার সম্পর্কে লিটন বলেন, ‘১২ বছর আগে প্রথম স্ত্রী মারা যান। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেছি। দুই স্ত্রীর সংসারে ছেলেমেয়ে ৫ জন। তিন মেয়ে দুই ছেলে। বড় মেয়েকে বিবিএ পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। কষ্ট হলেও বাকিদেরও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি।’

আরও ১১ বছর চাকরির বয়স রয়েছে লিটনের। চাকরি শেষে স্থায়ীভাবে সাতকানিয়ায় চলে যেতে চান তিনি। লিটন বলেন, ‘চাকরি শেষে আমার ইচ্ছে আছে এখানে একটি বইয়ের দোকান দেওয়ার। এ অঙ্গনে থেকে বই বিক্রি করব। একেবারে শেষ জীবনে জন্মভূমি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে। শেষ জীবন সেখানেই কাটাতে চাই।’

এমএইচডি/ওএফ