ছবি: প্রতীকী

‘মা’ মাত্র একটি শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, নিরাপত্তা আর নিশ্চিয়তা। মা মমতাময়ী, চির সুন্দর, সংগ্রামী আর আত্মত্যাগী। তাই তো সন্তানের সুখে-দুঃখে মা তার নিজের সবটা উজাড় করে দেন। পৃথিবীর আলো দেখার আগে যার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা গড়ে উঠে তিনি হলেন মা। কিন্তু এই ছোট্ট শব্দের মা ডাকে এখন আর তুমি সাঁড়া দাও না। আর সাড়া দিবেই বা কী করে এখন যে তুমি আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেছো। যেখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না।

মা তোমার কী মনে পড়ে সকালের মিষ্টি রোদে তোমার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সময়কার কথা। বই- খাতায় ঠাসা ভারী ব্যাগ কখনো তুমি আমার কাধেঁ না দিয়ে নিজে হাতে করে নিয়ে যেতে, যেন আমার কোন কষ্ট না হয়। স্কুল যাওয়ার পথে তোমার কাছে হাজারো আবদার করতাম আর তুমিও হাসি মুখে আমার সেই আবদার মেটাতে।

একবার বিকেলে পাড়ার মাঠে খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে  হাত-পা কেটে সমস্ত শরীরে ময়লা করে যখন বাসায় ফিরেছিলাম। তখন তুমি রেগে গিয়ে কী মাইরটাই না দিয়েছো। কিন্তু পরে আবার নিজেই আদর করে হাতে পায়ে মলম লাগিয়ে দিয়েছিলে। একবার তো স্কুল থেকে আসার সময় মিনি বাসায় এসে তোমার সঙ্গে মজা করে বলেছিলো, আম্মু জানো আপুকে না এক আন্টি ধরে নিয়ে গেছে। তুমি সব ভুলে পাগলের মতো পথে এসে আমাকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়েছিলে।

সত্যিই আমরা কতটা বোকা ছিলাম যে তোমার সাথে মজা করতে গিয়ে তোমাকে কাঁদিয়েছিলাম। ঈদে তোমাকে কখনো নিজের জন্য নতুন কাপড় কিনতে দেখিনি। কিন্তু আমাদের জন্য তুমি কখনো কার্পণ্য করোনি। শেষবার তোমার কাছে সেমাই খেতে চেয়েছিলাম। তুমি সেমাই রান্না করতে গিয়ে হঠাৎ করেই ব্রেন স্ট্রোক করে শয্যাশয়ী হলে। এরপর টানা চার বছর ধরে ব্রেন স্ট্রোক, প্যারালাইজড, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা এবং সবশেষ বাকরুদ্ধতার সঙ্গে লড়াই করে আমাদেরকে দুর্বোধ্য জগতে একা রেখে দূর দেশে পাড়ি জমালে। তোমার হাতের রান্না করা সেমাই আর খাওয়া হলো না। এমনকী তোমার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ায় শোনা হয়নি তোমার না বলা। জানি না তুমি দূর দেশ থেকে আমাদের দেখছো কি না। তোমার ভাবনায় আমাদের  প্রতিটি মুহূর্ত কাটে ব্যাকুলতায় আর তুমি না হয় মেঘেদের দেশে ভালো থেকো।

অনার্স চতুর্থ বর্ষ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।