ছবি: প্রতীকী

‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়। আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। মোরা সুখের দুখের কথা কবো, প্রাণ জুড়াবে তায়।’ বন্ধুকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে রবিগুরুর গানের কথাগুলো গুনগুনিয়ে যাচ্ছিল মনের কোণে। এই তো মাত্র ক’দিন আগের কথা! ক্যালেন্ডার পাতায় তখন ২০১৯ সালের কোনো বিকেল। কবি সুফিয়া কামাল হলের মাঠের এক বিকেল বেলা। দু’কাপ চা হাতে নিয়ে সবুজ ঘাসে বসে গল্প করা।

তারপর ঠিক কতোদিন দেখা হয়নি বল তো? হলের মাঠে হাসনাহেনা, মুসান্ডা, অলকানন্দার, শিউলি ফুলগুলো একটু একটু ফুটি ফুটি করে রাতভর সুরভি বিলাতো। আমাদের গল্পেরা যেন শেষ হতো না। রাত দশটায় লিফট বন্ধ হয়ে যেতো হলের। জীবনের কতো পরিকল্পনা, চিন্তা, স্বপ্নদের বুনতে বুনতে ঘড়ির কাটায় একটা ছুঁই ছুঁই। নগর ভবনের চুড়ায় ঘড়ির বড় ঘণ্টার কাঁটাকে পিছিয়ে দিতে মন চাইতো রোজ। তারপর দু’জন দু’দিকের বিল্ডিংয়ের ছয়তলা, সাততলা বেয়ে কী করে অনায়াসে উঠে যেতাম। তুমি গিয়ে অপরপাশে বিল্ডিংয়ের বাড়ান্দায় দাড়িয়ে বিদায় জানাতে!

একদিন নক্ষত্রেরও মরে যেতে হয়। সম্পর্কের নতুন মাত্রা আসে, প্রায়োরিটি ভাগ হয়ে যায়। নতুন দাম্পত্য, সংসার-সন্তানের ভীড়ে একটু একটু করে নিজেকে হারিয়ে ফেলি যেন আমরা। কলা ভবন কিংবা কার্জন হলের সামনে চাইলেই রিকশা থামিয়ে নেমে পড়তে পারি না। এই তো কদিন আগে শাহবাগ ছেড়ে রমনায় জ্যামে আটকে থাকতে থাকতে বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়ার বুনো উদ্যানে ভিজতে ইচ্ছে করছিল। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তবুও বলবো, নিজের জন্য সময় রেখো প্রিয় সখা!

এই যে এতো দিবসের ভীড়ে দুকলম তোমায় নিয়ে ভাবতে পারলাম,নস্টালজিয়া সময় এসে ধরা দিলো! এইবা কম কীসে? ব্যস্ততায় আমরা নিজেদের নিয়ে ভাবতেই যে ভুলে গেছি! তবুও আবার দেখা হোক বার বার, হলের পেছনটায় শিউলিফোঁটা সন্ধ্যায়। বিকেলের ধূমায়িত দুধ চা জুড়িয়ে যাক আমাদের অনিঃশেষ আড্ডায়।

ইতি,
ফারহু