কালপুরুষ, কালবেলা ও উত্তরাধিকারসহ বহু কালজয়ী উপন্যাসের লেখক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। তবে এ শেষকৃত্যে ছিল না কোন আচার-অনুষ্ঠান।

সমরেশ মজুমদারের মেয়ে দোয়েল মজুমদার জানিয়েছিলেন, কোন আচার অনুষ্ঠান হবে না । বাবা চাইতেন না বলেই এই সিদ্ধান্ত।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সমরেশ মজুমদার। এরপরই শোক নামে গোটা বাংলায়। পরদিন মঙ্গলবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় প্রখ্যাত এ কথাসাহিত্যিকের।

আরও পড়ুন- সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হলো: মমতা

এদিন সকাল থেকেই সাহিত্যিকের ৬৪ বি, শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে অনুরাগীদের ভিড় জমে। একদিকে যেমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আনাগোনা, তেমনই বিনম্র অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদনের হিড়িক ছিল জনসাধারণেরও।

১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন সমরেশ মজুমদার। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

লেখার গতি আর গল্প বলার ভঙ্গির কারণে দশকের পর দশক ধরে দুই বাংলার পাঠককে মুগ্ধ করে রেখেছেন সমরেশ মজুমদার। এই সাহিত্যিকের প্রথম উপন্যাস দৌড় প্রকাশিত হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৭৬ সালে। এরপর একে একে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ-এর মতো উপন্যাস পাঠককে উপহার দিয়েছেন তিনি।

তবে সমরেশের সেরা সৃষ্টি হিসেবে মনে করা হয় ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ ট্রিলজিকে। এই ট্রিলজি তাকে বাংলা সাহিত্যের জগতে বিশেষ খ্যাতি এনে দিয়েছে।

সমরেশের লেখনীর গণ্ডি শুধু গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে আটকে থাকেনি। ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দা কাহিনি, কিশোর উপন্যাস রচনায় সমরেশ ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তার ঝুলিতে রয়েছে অনেক পুরস্কারও। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইওয়াইএমএস পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের পাঠকদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল বেশ নিবিড়। কলকাতা ও বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখকদের একজন হিসেবে পাঠক মন জয় করেছেন তিনি। সমরেশ মজুমদার শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন ২০১৯ সালে।

এমজে